সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনকে ঘিরে নিউইয়র্কসহ বিশ্বের বড় বড় শহরে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এবং জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্টরা একত্রিত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ আচরণ মোকাবিলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ের করণীয় নির্ধারণে তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো জানাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে নেটশূণ্য কার্বন নিঃসরণ ধারণাটি আবার সামনে এসেছে। কিন্তু বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শীতল প্রতিক্রিয়া নেট শূন্যকার্বন নিঃসরণ ধারণাটিকে ক্রমশ রহস্যাবৃত করছে।
প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন (COP-21) থেকে নেটশূন্য কার্বন ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে। গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন এবং মিশরের শারম আল শেখ সম্মেলনেও নেটশূন্য কার্বন নিঃসরণের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। প্যারিস চুক্তিতে এ সম্পর্কে সরাসরি কোনো কথা না থাকলেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে কোনো এক সময় শূন্য নিঃসরণ প্রয়োজন। মূলত এখান থেকেই নেটশূন্য কার্বন নিঃসরণ (NZE) ধারণাটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ হলেই নেটশূন্য নির্গমন অর্জন হয় না। মানুষের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাতাসে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এবং বাতাস থেকে অপসারিত নির্গমন যখন ভারসাম্যপূর্ণ হয় তখন সেই অবস্থাকে নেটশূন্য বলা হয়। এর অর্থ হচ্ছে কোনো একটি প্রক্রিয়ায় হয়তো বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ করা যাবে। কিন্তু জলাধার, মাটি, বনভূমি ও অন্যান্য মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত এসব গ্রীনহাউস গ্যাস অপসারিত না হলে শূন্য নির্গমন অর্জন হয়তো সম্ভব কিন্তু নেটশূন্য নির্গমন অর্জন সম্ভব নয়।
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল (IPCC) ২০১৮ সালে তাদের পর্যালোচনায় জানিয়েছে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে ২০১০ সাল থেকে মানবসৃষ্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন প্রায় ৪৫ শতাংশ হ্রাস করতে হবে। তবেই ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যস্তরে এবং ২০৫০ সালের দিকে নেট শূন্য নির্গমনে পৌঁছানো সম্ভব হবে। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের মতে এটি করতে গেলে ১০টি কর্মপন্থার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে, অবকাঠামোগুলোকে ডি-কার্বনাইজ করতে হবে, সিমেন্ট, স্টিল ও প্লাস্টিক শিল্পকে ডি-কার্বনাইজ করতে হবে, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারে যেতে হবে, গণপরিবহন বৃদ্ধি করতে হবে এবং হাঁটা ও বাইকিংকে উৎসাহিত করতে হবে, এভিয়েশন ও জাহাজ শিল্পকে ডি-কার্বনাইজ করতে হবে, বন নিধন বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি পুনরুদ্ধার করতে হবে, কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং পরিশেষে খাদ্যাভ্যাসে মাংসের ব্যবহার কমিয়ে সবজির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। উল্লেখ্য যে, এসব কারণে COP-27 সম্মেলনে পাঁচটি প্রধান সেক্টর যেমন- বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহন, স্টিল শিল্প , হাইড্রোজেন জ্বালানি এবং কৃষি খাতকে COP-28 সম্মেলনের আগে কার্বনমুক্ত করতে ২৫টি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে একটি অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শ প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি বা উডম্যাকের ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের প্রতিবেদন অনুসারে বর্তমানে বৈশ্বিক জ্বালানি খাতকে কার্বনমুক্ত করতে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তাদের মতে শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই পরিমাণ ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার করতে হবে। তবেই বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হবে। উন্নয়ন অর্থনীতির চালিকাশক্তি যেহেতু বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাস খাত এবং কার্বন নিঃসরণের প্রধান খাতও এটি, সেহেতু এই বিপুল বিনিয়োগের তিন-চতুর্থাংশই করতে হবে শক্তি ও অবকাঠামো খাতে। এখানেই আসে রাষ্ট্রগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সদিচ্ছা ও সক্ষমতার বিষয়টি।
ক্লাইমেট আ্যকশন ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৬টি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে নেটশূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, ১০টি দেশ ২০৫০ সালের আগেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অঙ্গীকার করেছে, ১৫টি দেশ ২০৫০ সালের পরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, একটি দেশ অন্য ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, ৫টি দেশের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণযোগ্য নয় এবং ১০১টি দেশ কোনো লক্ষ্যমাত্রা উপস্থাপন করেনি। ক্লাইমেট আ্যকশন ট্র্যাকার শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের এই অবস্থানকে গ্রহণযোগ্য, গড় মান, দুর্বল অঙ্গীকার, অসম্পূর্ণ তথ্য সম্বলিত ও লক্ষ্যহীন এই ৫টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে। শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর অঙ্গীকার এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়। ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকারের নভেম্বর ২০২২ এর রেটিং থেকে দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয় শীর্ষ নিঃসরণকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০৫০ সালের মধ্যে তাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা ছিল গড় মানের অঙ্গীকার। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান থেকেও এটি স্পষ্ট। ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৭ সালে জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের যুক্তি ছিল এটা অন্যায্য চুক্তি । এতে কেবল ভারত ও চীন লাভবান হবে। অবশ্য জানুয়ারি ২০২১ এ বাইডেন প্রশাসন আবার চুক্তিতে ফিরে আসে। শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন ২০৬০ সালে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অঙ্গীকার করেছে । ক্লাইমেট আ্যকশন ট্র্যাকারের রেটিং অনুযায়ী তাদের অঙ্গীকার দুর্বল মানের। তৃতীয় শীর্ষ নিঃসরণকারী দেশ ভারতের লক্ষ্যমাত্রা ২০৭০ সাল এবং ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকারের রেটিং অনুযায়ী তা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারত নেটশূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য ঘোষণা করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে এই ঘোষণা জলবায়ু সংকটের কোনো সমাধান নয়। নেটশূন্যে পৌঁছানোর আগে রাষ্ট্রগুলো বায়ুমণ্ডলে কতটুকু কার্বন যোগ করছে সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ শীর্ষ নিঃসরণকারী রাষ্ট্র রাশিয়া ২০৬০ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকারের রেটিং অনুযায়ী তাদের অবস্থান দুর্বল এবং একেবারেই যথেষ্ট নয়।
রাষ্ট্রসমূহের দুর্বল অঙ্গীকারের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয় তাদের দেশীয় অবস্থান এবং ক্ষমতার রাজনীতির চর্চাকে। উন্নত দেশগুলো তাদের জনসাধারণের বিলাসী জীবনমান বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর আর অনুন্নত দেশগুলো তাদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই প্রতিযোগিতা থেকে বিশ্বব্যাপী চলছে নিয়ন্ত্রণহীন দূষণ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা থেকে রাষ্ট্রনেতারা নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ করতে চান না। এর প্রতিফল আমরা দেখতে পাই COP-26 সম্মেলনে। কার্বন নিঃসরণের অন্যতম প্রধান খাত হচ্ছে কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্ট। শীর্ষ কয়লা উৎপাদন ও ব্যবহারকারী রাষ্ট্র ভারত, চীন ও অস্ট্রেলিয়া COP-26 সম্মেলনে শিল্প কারখানায় কয়লার ব্যবহার বন্ধের প্রস্তাবনাকে সরাসরি না করে দিয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঙ্গীকার করেছে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা তাদের দূষণের ৫৫ শতাংশ কমিয়ে আনবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বাধিক নিঃসরণকারী দেশ জার্মানি, ইতালি ও পোল্যান্ড তাদের কয়লাভিত্তিক দূষণ কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকারের মতে ২০১৮ সাল থেকে ইইউ’র কার্বন নিঃসরণ কমছে এবং এ ব্যাপারে ইইউ গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথেষ্ট।
বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের গৃহীত এতসব পদক্ষেপ ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সত্ত্বেও নেটশূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জন কঠিন হয়ে যাবে, যদি বায়ুমণ্ডলকে কার্বনমুক্ত করণের কারিগরি দিক টেকসই ও সহজলভ্য না করা যায়। বলা যায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে নেটশূন্য অর্জনের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলে শোষিত গ্রিনহাউস গ্যাস মুক্তকরণ। এক্ষেত্রে যে দুটি প্রক্রিয়ার কথা সাম্প্রতিক সময়ে বেশি উচ্চারিত হয় তা হচ্ছে, কার্বন অপসারণ(Carbon Removal) ও কার্বন ক্যাপচার (Carbon Capture)।
কার্বন অপসারণ একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেখানে পরিবেশের কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রাকৃতিকভাবে জৈব এবং অজৈব পদার্থ দ্বারা সংগ্রহ বা শোষিত হয়। এটা কয়েক দশক বা শতাব্দী ধরে সবুজ গাছপালা, মাটি, শিলার অভ্যন্তরে, জলাভূমি ও সমুদ্রে সংরক্ষিত হতে পারে। বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এটি ঝুঁকিমুক্ত প্রক্রিয়া হলেও এই প্রক্রিয়ায় গ্যাসটি আলাদা হতে দীর্ঘ সময় নেয়। সমুদ্র কর্তৃক যত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষিত হয় তত তার শোষণ ক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে একটা পর্যায়ে এটি আর কোনো কাজ করবে না। আবার তাপমাত্রা বাড়লে মাটির কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হারও বাড়ে। এতে পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। বনভূমির আচ্ছাদন সম্প্রসারণ করা কার্বন অপসারণের একটি রূপ হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে বন নিধনের হার জানিয়ে দিচ্ছে নেটশূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জনে কার্বন অপসারণ কোনো কার্যকর পদ্ধতি নয়।
নেটশূন্য নিঃসরণ অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বাধিক উচ্চারিত প্রত্যয় হচ্ছে কার্বন ক্যাপচার (Carbon Capture) যাকে অন্যভাবে DACS (Direct Air Capture & Storage) বলা হয়। এটার মাধ্যমে এমন একটা প্রযুক্তিকে বোঝানো হয়, যা কোনো কারখানা বা পাওয়ার প্লান্ট থেকে বেরিয়ে আসা কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হওয়ার আগে আটকাতে পারে এবং স্থায়ীভাবে মাটির নিচে চাপা দেওয়া যেতে পারে যেখানে এটি আর গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে কাজ করবে না। এই প্রযুক্তিতে আকাশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড টানতে দৈত্যাকার ফ্যান এবং ফিল্টার ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য বিপদগুলো হলো- ভূগর্ভস্থ স্টোরেজ সাইটগুলো পুরোপুরি সিল করার জায়গা নেই। ফলে শিলার মধ্যে পাম্প করা গ্যাস প্রাকৃতিক ফল্ট লাইন বরাবর কাছাকাছি জলাশয় ও মাটিতে লিক করতে পারে এবং তাদের দূষিত করতে পারে। সর্বোপরি বলা যায় প্রযুক্তিটি এখনও অত্যন্ত প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী বৃহৎ পরিসরে এর অর্থনৈতিক ও কারিগরি সক্ষমতা এখনও পরীক্ষিত নয়।
প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির এতসব দুর্বল দিক সত্ত্বেও মানবজাতিকে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির পূর্বে নিঃসরণের হার প্রাক-শিল্প যুগের পর্যায়ে রাখতে হবে। নইলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের এই প্রিয় পৃথিবী জলবায়ুগতভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে আমরা কী পরিবেশ বিধ্বংসী উষ্ণতর উন্নয়ন চাই, নাকি পরিবেশসম্মত সহনীয় উন্নয়ন চাই। দূষণমুক্ত পরিবেশ চাইলে তেল, গ্যাস, সিমেন্ট, স্টিল শিল্প থেকে যেহেতু সবচেয়ে বেশি নিঃসরণ হয় ফলে এসব শিল্পের নিঃসরণ রোধের প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে হবে। তেল, গ্যাস উত্তোলনের সময় মিথেন লিকেজ বন্ধের প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে হবে। কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও বর্জ্য থেকে যেহেতু নাইট্রাস অক্সাইড উৎপাদন হয় সেহেতু কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে হবে। কয়লাভিত্তিক প্লান্টগুলো বর্জন করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন- সৌর বিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। বনভূমির আচ্ছাদন সম্প্রসারণ করতে হবে। সর্বোপরি কার্বন ক্যাপচারের মতো প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে হবে। তবেই হয়তো ভবিষ্যতে নেটশূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে।
লেখক: অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।