সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শেরপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরম বিষোদগারকারী বিএনপি-জামায়াত সমর্থক মাদরাসা শিক্ষক মো. মেরাজ উদ্দিনকে এবার আওয়ামী লীগের বরণ করে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে শহরের নিউমার্কেট এলাকায় আয়োজিত এক যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন।
অন্যদিকে জামায়াত সমর্থক মাদরাসা শিক্ষক মেরাজের যোগদান সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক। এছাড়া তার যোগদানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও পেশাজীবী সংগঠনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আওয়ামী লীগে যোগদান এবং ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক দেবাশীষ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মাদরাসা শিক্ষক মো. মেরাজ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে মেরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর আওয়ামী লীগে যোগদানের কথা বলা হলেও এদিন যোগদান করেন শহর জাসদের সাধারণ সম্পাদক টুকন সাহা, বিএনপি সমর্থক পিটার চৌধুরী ও সাংবাদিক আলমগীর হোসেন এবং জামায়াত সমর্থক মো. মানিক মিয়াসহ ৬ জন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক বলেন, ওই যোগদান সম্পর্কে তিনি ও জেলা আওয়ামী লীগ কিছু জানে না। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার সুস্পষ্ট উপেক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র এমপি তার সমর্থকদের পাল্লা ভারি করতে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে বরণ করছেন।
জানা যায়, সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের হেরুয়া বালুরঘাট গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মেরাজ উদ্দিন কলেজ জীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে শেরপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক ও জেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জেলা যুবদলের সাংঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে ছাত্রদল নেতা খোকন স্মরণে প্রকাশিত ‘রক্তিম সূর্য’ নামে স্মরণিকায় বঙ্গবন্ধুর চরম বিষোদগার করে তার ‘গণতন্ত্রের ২১ বছর’ শীর্ষক একটি লেখা ছাপা হয়। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বৈরাচার এবং ৭৫ এর পট-পরিবর্তনকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেইসঙ্গে ৭৫-৯৬ সময়কালকেই গণতন্ত্রের ২১ বছর উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিষোদগার করা হয়।
১৯৯৫ সালের দিকে তিনি জামায়াত পরিবারে বিয়ে করেন এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আনুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত ফসিহ উল উলুম নামে একটি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সঙ্গেও জড়িত হন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও বিএনপিদলীয় তৎকালীন হুইপ আলহাজ্ব মো. জাহেদ আলী চৌধুরীর এবং যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত কামারুজ্জামানের সঙ্গে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। ওইসময়ে ক্ষমতার নাম ভাঙিয়ে নিজ এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খোকনসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠে। কেবল তাই নয়, ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শনে কামারেরচর এলাকায় গেলে তার গাড়িবহরে হামলা ও নাশকতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধেও থানায় মামলা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি জামায়াতের অঙ্গন ছেড়ে ক্ষমতাসীন নেতাদের আনুকূল্য আদায়ের অপচেষ্টায় মাতেন। এক পর্যায়ে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিকের নামে তার নিজ এলাকায় আতিউর রহমান মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
এ বিষয়ে মেরাজ উদ্দীন বলেন, আমি আগে থেকেই আওয়ামীলীগের কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করতাম এবং আমি বঙ্গবন্ধকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করতাম। আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগদান করলাম। আমাদের নেতৃত্বে ভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।
এফএইচ