সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কুড়িগ্রামে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার নতুনহাটের ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন এলাকা থেকে এক জিনের বাদশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম মো. আ. রশীদ।
অভিযোগকারী খয়বার আলী জানান, প্রায় ৪দিন ধরে আমার মায়ের মোবাইল ফোনে কথা বলে আল্লাহর অলী দরবেশ পরিচয় দিয়ে সালাম-কালাম করে বলে মা তোর ভাগ্যে বহু ধন-রত্ন দেখা যাইতেছে তুই বড় ভাগ্যবান।
তুই ছোট বেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করতেছিস। আমাকে তোর কাছে আল্লাহ তার দরবার থেকে পাঠাইয়া দিয়ে তোর প্রাপ্য ধন-সম্পদ (৭রাজার ধন) আল্লাহর নির্দেশে সাতশত জন জিন পাহাড়া দিতেছে। এই ধন-সম্পদ তুই যদি পাইতে চাস, তাহলে তোকে আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদে কুরআন শরিফ, জায়নামাজ, টুপি দান করতে হবে।
এভাবে আল্লাহর ওলি ও দরবশে সেজে ওই ব্যক্তি আমার মায়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত গভীর রাতে মোবাইলে কথা বলতে থাকে এবং আমার মাকে মূল্যবান ধন-সম্পদ পাওয়ার লোভ-লালসা দেখাতে থাকে।
তখন আমার মা সেই আল্লাহর ওলি, দরবেশ হিসেবে দাবি করা ব্যক্তিকে জানায় যে, কুরআন শরিফ, জায়নামাজ, টুপি আমি কোথায় দেব? তখন আল্লাহর ওলী দরবেশ আমার মাকে জানায় যে বিকাশে এক হাজার টাকা পাঠাইয়া দিলে কুরআন শরিফ, জায়নামাজ, টুপি তোর নামে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে দেব। আমার মা ধর্মভিরু ও গ্রামের সহজসরল বৃদ্ধ মহিলা হওয়ায় জিনের বাদশার কথায় তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সরল বিশ্বাসে ঘটনার পরের দিন স্থানীয় এজেন্টের বিকাশ নম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে দুইবার চাহাজার টাকা বিকাশ করে।
আল্লাহর দরবেশ সেজে প্রতারক আসামি আমার মাকে আরো বলে যে, মা তুই গুপ্ত ধন-সম্পদ পাইতে চাইলে আল্লাহকে খুশি করার জন্য কিছু র্স্বণের গহনা দিতে হবে। আমার মাকে আরও বলে যে, একটি মাটির খালি পাতিলে চাল রাখিয়া একটি ঢাকনা সহ সাদা কাপড় দ্বারা বেঁধে তোর ঘরের গোপন জায়গায় রেখে দে। মা তুই ও তোর স্বামী জায়নামাজের ওপর নফল নামাজ আদায় কর। পাতিল আমি না বলা র্পযন্ত খুলবি না। আমার মা দরবেশের কথামত পাতিলটি ঘররে গোপন জায়গায় রেখে দেয়।
এরপর দরবেশ আমার মাকে ভূরুঙ্গামারীর নতুনহাটের ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন মাদরাসার মাঠে গাছের নিচে গহনাপত্র রুমালে বেঁধে রাখতে বলেন এবং পেছনে তাকাতে নিষেধ করে। তাকালে আমার মায়ের অমঙ্গল হবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। আমার মা তাহার কথামত গুপ্ত ধন-সম্পদ পাওয়ার আশায় গত ১০ অক্টোবর সন্ধ্যা আনুমানিক ছটায় ওই স্থানে যায়। ওই স্থানের আশেপাশে এক ব্যক্তি সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করায় পরবর্তীতে গ্রাম পুলিশসহ কয়েক জন লোকের কাছে জিনের বাদশার ঘোরাফেরা সন্দেহজনক মনে হলে স্থানীয় আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার নাম ঠিকানা একেক সময় একেক ঠিকানা বলে।
পরবর্তীতে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার মাড়িয়া গ্রামের মো. আ. রশিদকে (৪০) গ্রেপ্তার ও তার হেফাজত থেকে একটি স্বর্ণ রংয়ের পিতলের মূর্তি ও ১টি পুরাতন ফাইভ স্টার বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায় যে ভিকটিম মোছা. খয়ের জানকে (৬৮) স্বর্ণের রংয়ের পিতলের মূর্তিটি দেখিয়ে স্বর্ণের মূর্তি হিসেবে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য জিনের বাদশা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা হতে চর ভূরুঙ্গামারী এসেছিল। পরবর্তীতে আসামিকে গ্রেপ্তার করে ভূরুঙ্গামারী থানার একটি দল। প্রতারক নানাকণ্ঠে নানাভাবে অসংখ্য মহিলাকে ভুলভাল বুজিয়ে অনেক প্রতারণা করেছেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রুহুল আমীন বলেন, গ্রেপ্তার আসামি নিজেকে জিনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দেওয়া মো. আ. রশীদ বিভিন্ন জেলার নাগরিকের গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছিলো। এই সব বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলার সম্মানিত নাগরিকদের আরও সতর্ক হওয়ার এবং এই ধরনের ঘটনা ঘটলে জেলা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করছি। নিরাপদ কুড়িগ্রামের লক্ষ্যে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।
জেবি