সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কয়েক মাস আগের কথা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফিনিক্স বিমানবন্দরের বাইরে পা রাখতেই আগুনে গরম হাওয়ার ঝাপটা মনে হবে, কেউ বুঝি আপনাকে মাইক্রোওয়েভের ভিতরে ভরে দিয়েছে। রাত ৯টা বাজলেও তাপমাত্রা কমার কোনও নাম নেই। পর্যটকদের হাঁসফাঁস করতে দেখে বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীর সহাস্য উক্তি, ‘ফিনিক্সে স্বাগত। চিন্তা করবেন না, এক-দু’দিনেই অভ্যাস হয়ে যাবে। চিন্তা না করে উপায় আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ দপ্তরের অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল বন্ধু সুমনার সঙ্গে। দিনাজপুরে বড় হওয়া সুমনা তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে গত সাত বছর ধরে ফিনিক্সের বাসিন্দা বলছিলে, দিনাজপুর আর ঢাকার গরম একরকম। কিন্তু ফিনিক্সের গরম অন্যরকম! চারদিকে মরুভূমি গত কয়েক বছরে গরম আরও বেড়েছে, মাঝে মধ্যে একটু বৃষ্টি হয়। না হলে দিনের বেলা বাড়ি বা অফিসের ভেতরে থাকলেই ভালো’ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারির সময় ঠিক একই ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়, এখানে বাড়তি সংযোজন? পানি সঙ্কট, গরম বাড়ছে আর কমছে পানির পরিমাণ।
‘আমার শহরে শুকিয়ে যাচ্ছে জল আস্তে আস্তে লুকিয়ে যাচ্ছে জল ফুরিয়ে আসছে স্নান করবার দিন...’ তিমির বিশ্বাসের গানটি অ্যারিজোনাবাসীর শোনার কথা নয়, কিন্তু শুনলে তারাও একবাক্যে সহমত হতেন, কেন? অ্যারিজোনায় ভূগর্ভস্থ পানি বাড়ন্ত আর সেই কারণেই এবার নতুন আবাস নির্মাণ প্রকল্পে রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন জানানো হয়েছে, ফিনিক্সে আর সত্যিই কোনো ভাবেই নতুন আবাস নির্মাণ প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হবে না
সুমনা বলছিলে, এই মুহূর্তে নতুন আবাস নির্মাণ প্রকল্পের নিরিখে আমেরিকার অন্যতম প্রধান শহর ফিনিক্স এই গতিতে আবাসন তৈরি হলে আগামী শতাব্দীতে পানির চাহিদা আকাশ ছোবে আামাদের হয়তো ফ্লাট বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে পানিসঙ্কট যে বড় সমস্যা হতে চলেছে, মানছেন অনেকেই তা বলে কি এত কষ্টে জমানো টাকায় কেনা বাড়ি কি ছেড়ে যেতে হবে? ফিনিক্সের এক সাততাঁরা হোটেলে থাকার সময় সেখানে কথা হলো বরিস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার কথা পানি নষ্ট হবে বলে সপ্তাহে একদিন গাড়ি সাফ করি কোথাও পানি নষ্ট হচ্ছে দেখলে বাঁচানোর চেষ্টা করি কিন্তু একা একা কিছু মানুষের পক্ষে তো সবটা সম্ভব নয়, সচেতন হতে হবে সবাইকে’ বলছিলেন তিনি।
বিষয়টি যে উদ্বেগজনক, মানছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এমিরেটাস অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক বিল উইলিয়াম সিলকক ফিনিক্সে নিজের বাড়ি পরবর্তী প্রজন্মের অবস্থা ভেবেই তিনি শঙ্কিত ডেমোক্র্যাট গভর্নর কেটি হবস অবশ্য এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু দেখছেন না। অ্যারিজোনাবাসীকে তাঁর আশ্বাস, পরিস্থিতির মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
একইসঙ্গে নতুন আবাসনগুলির ক্ষেত্রে কিভাবে বিকল্প পানির ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়েও শুরু হয়েছে চিন্তাভাবনা এতেই চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ক্রমশ বাড়তে থাকা গড় তাপমাত্রার জন্য কলোরাডো নদীর পানি অতিরিক্ত পরিমাণে বাষ্পীভূত হচ্ছে। চাষের জন্যও দরকার হচ্ছে বাড়তি পানি। বিশ্ব উষ্ণায়নের মধ্যে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে সমুহ বিপদ। ভবিষ্যতে একদিন হয়তো শুকিয়ে আসা শহরের বুকে দাঁড়িয়ে সত্যিই কেউ বলে উঠবে ‘অন্য কোথাও চল।’
কে