সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভোটার করার জন্য জন্মসনদ ইস্যু, ভুয়া মা-বাবা পরিচয়ধারী বানিয়ে দেয়া এবং নাগরিক সনদ প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে কক্সবাজারের বেশ কিছু জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। এমন একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিলো কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে। ৩৮ জন রোহিঙ্গাকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র করিয়ে দেয়া, জন্মসনদ দেয়া ও রোহিঙ্গা নয় মর্মে প্রত্যয়ন দেয়ার কথা উঠে আসে অভিযোগে।
এর প্রেক্ষিতে গেলো বছরের ৭ ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখা।
যেভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত ও প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরে তিনজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
সেই কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দেয় প্রায় ৯ মাস পর ২৯ অক্টোবর। যা আবার স্থানীয় সরকার শাখার কাছে পাঠানো হয় ১৪ নভেম্বর।
কিন্তু সাক্ষিদের সাক্ষ্যপ্রমাণ তদন্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত নেই এবং কার কতোটুকু দায়িত্ব তাও নিরুপন করা হয়নি উল্লেখ করে পুনরায় তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয় ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। স্থানীয় সরকার শাখা থেকে যে চিঠিটি দেয়া হয় চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি। তৎসময়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক নাসিম আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে যদিও কতোদিনের মধ্যে পুন:তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে তার সময়সীমা উল্লেখ নেই।
এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবার তিনজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন তদন্তের। ২৩ জানুয়ারি ইস্যু করা ওই চিঠিতে ৭ দিনের কথা বলা হয়।
সব মিলিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথম ইস্যু করা চিঠি থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩৪ দিন পেরিয়ে গেলোও তদন্ত তদন্ত খেলা শেষ হয়নি!
এদিকে যে তদন্ত প্রতিবেদনটি পুনঃ তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছে, সেটি দেশ টিভির হাতে আসে। জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার স্বাক্ষরিত ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় - বাংলাদেশীদের নকল বাবা মা সাজিয়ে, বয়স জালিয়াতি করে করানো হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন, তারপর প্রক্রিয়া করে সারানো হয় জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার কাজ। যার সুস্পষ্ট প্রমাণ কমিটি পায় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এমনকি কোন কোন ব্যক্তিকে নকল বাবা মা সাজানো হয়, তাদের নামও উল্লেখ করা হয়। অনেক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্রে উল্লেখ করা ঠিকানাও ছিলো ভুয়া।
তদন্ত কমিটি সুপারিশ করে- "ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে চরমভাবে অবহেলা করেছেন এবং রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশী সনদ প্রদানে জড়িত ছিলেন বিধায় তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।"
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুর শুক্কুর বলেন, প্রতিবেদনে যেটুকু প্রমাণাদি দেয়া হয়েছে তাতেই স্পস্ট এখানে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী বানানো হয়েছে। আলাদা করে সাক্ষিদের সাক্ষ্য সংযুক্তির দরকার পড়েনা। তদন্ত নিয়ে এমন কালক্ষেপণ অপরাধের বিষয়টিকে গৌণ করা হচ্ছে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
গেলো বছরের ১০ মার্চ দেশ টিভিতে প্রচারিত হয় ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ফিরিস্থি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। সরেজমিনে করা সেই প্রতিবেদনেও উঠে আসে -বাংলাদেশীদের নকল বাবা মা সাজিয়ে, বয়স জালিয়াতি করে জন্ম নিবন্ধন, জনপ্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা নয় মর্মে প্রত্যয়ন প্রদান ও তারপর প্রক্রিয়া করে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরির করার নানান কৌশল। যা ৯ মাস পর ২৯ অক্টোবর তদন্ত কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনের সাথে বেশ সাদৃশ্য ছিলো।
বিষয়টি নিয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক এসএম ফেরদৌস ইসলামের দপ্তরে গেলে তিনি বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। শীঘ্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তদন্তের বিষয়ে জানার জন্য ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তিনি সাড়া না দেয়ায় সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
আবারো প্রার্থী হলেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। যেখানে প্রার্থী হয়েছেন রোহিঙ্গাদের ভোটার করা সেই চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম। তদন্ত কমিটির দীর্ঘসূত্রিতার কারনে অপ্রমাণিত থেকে যাওয়ায় আবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান তিনি।
জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করার ক্ষেত্রে সহায়তা করলে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও একলক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
জেবি