সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় একটি মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের জেরে বিক্ষুব্ধ লোকজনের হামলা ও মারধরে প্রাণ গেছে পাশের একটি স্কুলের নির্মাণকাজে নিয়োজিত নির্মাণ শ্রমিক দুই ভাইয়ের। এসময় আহত হয়েছে আরও অন্তত পাঁচজন।
নিহত দুই নির্মাণ শ্রমিক হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকার কালী মন্দিরে এই ঘটনা ঘটে। পরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেখানে ৪ প্লাটুন বিজিবি ও ঢাকা থেকে অতিরিক্ত দেড়শ পুলিশ এনে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার জানান, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা পঞ্চপল্লীর কালী মন্দিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুনের ঘটনা ঘটে। পাশেই পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকরা টয়লেট নির্মাণের কাজ করছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আগুন দেওয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ সেখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন। পরে স্কুলে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে দুইজন নিহত হয়।
জানা যায়, কালী মন্দিরে আগুনের ঘটনার পর নির্মাণ শ্রমিকদের গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের কক্ষে হাত-পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে আটকে রাখা হয়।
খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর প্রথমে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরেও হামলা করা হয়। এ সময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
এ সময় এলাকাবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ।
খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর আহতদের উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.হাসানুজ্জামান জানান, মধুখালীতে মন্দিরে আগুনের ঘটনায় হামলায় আহত দুই তরুণকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আনার পর তাদের মৃত্যু হয়। তারা সম্পর্কে ভাই।
হামলায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গুরুতর আহত দুইজন ফরিদপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। আর মধুখালী হাসপাতালে ভর্তি আছে বাকি তিনজন।
স্থানীয় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন বলেন, বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি মাঠে বসেছিলাম। কিছু সময় পরে এই ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবু আমাকে ফোন দেন। বলেন, আপনি দ্রুত আসেন, এখানে মন্দিরে আগুন দিছে।
তিনি বলেন, কে বা কারা আগুন দিয়েছে জানতে চাইলে অজিত বাবু বলেন, এখানে লেবাররা আগুন দিছে। তাদেরকে ধরে রাখছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে এখানে আসলাম। এসে দেখি হাজার হাজার জনতা। আমি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু দেখলাম পরিস্থিতি বেগতিক। এখানে আসলে প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না। আমি একুট সরে গিয়ে প্রশাসনকে ফোন দেই, ইউএনওকে ফোন দেই। পরে প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ডিপি/