সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ছাত্রীকে মধ্য রাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অঙ্ক বুঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, শাড়ি পরে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছাত্রীর ছবি চাওয়া, ম্যাসেঞ্জারে অন্তরঙ্গের ভিডিও লিংক শেয়ার করার মতো নানান অভিযোগ উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে।
আরও জানা যায়, জুনিয়র সহকর্মীর এমন অনৈতিক কাজে প্রত্যক্ষ-পরক্ষোভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানকে মৌখিকভেবে এ বিষয়ে জানালে, সংকট উত্তরণের জন্য ভুক্তভোগীকে বেধে দেন একাধিক শর্ত। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিভাগের অন্য দুই সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক রিমন সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ফাহামিদা সুলতানার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে দেওয়া।
৩ মার্চ (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া লিখেছেন, ২০১৯ সালে প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন থেকেই মানব সম্পদ ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সাজন সাহা স্যার আমাকে নানান ধরনের মেসেজ দিতেন। প্রথম দিকে ভালো মেসেজই দিতেন তাই আমি বিষয়টাকে এড়িয়ে চলেছি। নানান সময়ে নানান কথায় একটু খটকা লাগলেও আমি ইগ্নর করেছি ভেবেছি স্যার মনে হয় আমাকে স্নেহ করেন এই কারণে মেসেজ দেন। এভাবে চলে আসে ২০২১ সাল। ২০২১ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখে রাত ১টা বেজে ৩৩ মিনিটে উনি আমাকে মেসেজ দেন, "আসেন চা খাই", আমি উত্তরে বললাম স্যার অবশ্যই এনিটাইম, (ফরমালি), উনি রিপ্লাইয়ে বললেন "আমি যদি বলি এখনই?" আমি উত্তরে বললাম এখন তো পসিবল না স্যার অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। পরে উনি কথা ঘুরিয়ে বললেন" না এখন না"।
শিক্ষকের এমন সব অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ঐ ছাত্রীর শিক্ষাজীবনে পরতে পরতে নেমে আসে বিপদ। অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় বসতে গুনতে হয় জরিমানা, নম্বর কমে যায় পরীক্ষার খাতায়, আটকে যায় থিসিস পেপারসহ এমন আরও অনেক রকমের ভোগান্তি। সময়ের সঙ্গে ঘনীভূত হতে থাকে সংকট। সর্বশেষ উপায় না পেয়ে মুখ খুলেন ঐ বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজনা আহসান ছোঁয়া। এবং সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন দীর্ঘ পাঁচ বছরের বিভিন্ন সময়ের ভোগান্তির ঘটনা প্রবাহ। যেখানে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবনের প্রত্যেক ধাপেই তিনি হয়েছেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘ সময় ধরে নিরবে নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করে। সোস্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়তে থাকে অন্তত পনের শতাধিক ছাত্রীর সঙ্গে করা অনৈতিক কনভেনশনের।
এ ঘটনায় সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। উক্ত আন্দোলনে ছয় দফা দাবি জানিয়ে আটচল্লিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন তারা।
ছয় দফা দাবিসহ একটি লিখিত অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পেশ করেন। যেখানে তারা অভিযুক্ত শিক্ষকদের চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার চান। যেখানে উল্লেখিত দাবিগুলো হলো অভিযুক্ত শিক্ষকে চাকুরিচ্যুত, অপরাধের সঙ্গে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অনতিবিলম্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ভবিষ্যতে এ ঘটনার কোনো বিরুপ প্রভাব না পড়ার নিশ্চয়তা নিশ্চিত এবং আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন।
এবিষয় অভিযুক্ত শিক্ষক সাজন শাহার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অফিসে গেলেও পাওয়া যায়নি, এবং একাধিকবার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া যায় মুঠোফোনটি।
মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ‘তাদের যে অভিযোগ তারা এটি বিভাগ বরাবর জানালে আমরা ব্যাবস্থা নিতাম। তবে সেটা তারা করেননি। তারপরও আমরা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চাই। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ থাকলে আমিও জানতাম। অভিযোগ করলেই হবে না এর সত্যতা প্রমান করতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, এটি খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। আমার কাছে ছেলে মেয়েরা এসেছে, আমি আগামীকাল ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এফএইচ