সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
নওগাঁয় পৌর মাছ বাজারের আড়তে সরকারের বেঁধে দেওয়া ডিজিটাল মিটারে মাছ বেচাকেনা নিয়ে দুইপক্ষের বিরোধ শুরু হয়েছে। সরকারের নির্দশেনা বাস্তবায়নে আড়তদাররা ডিজিটাল মিটার চালু করতে চাইলেও পাইকাররা তা মানতে নারাজ। ইতোপূর্বে পাইকারি বাজারে একাধিকবার প্রশাসন ডিজিটাল মিটার চালু করার জন্য নির্দেশনা দেয়। সে মোতাবেক রোববার (১ অক্টোবর) সকাল থেকে আড়তদাররা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করে।
জানা গেছে, গত প্রায় ৫০ বছর থেকে নওগাঁ পৌর মাছ বাজারে মাছ বিক্রি হয়ে আসছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ২২টি আড়তে মাছ বেচাকেনা হয়। ওজনের কাটার পাল্লায় ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে আড়তদাররা বিক্রি করে। এরপর পাইকাররা খুচরা বাজারে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজেদের মতো মাছ বিক্রি করে। তারা কাটার ওজনে মাছ কিনে ডিজিটাল মিটারে খুচরা বিক্রি করে। আড়তে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য প্রশাসন থেকে নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে। সে মোতাবেক আড়তদাররা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করে। কিন্তু পাইকাররা ডিজিটাল মিটারে মাছ কিনতে নারাজ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে। একে অপরকে দোষারোপ করছে। পাইকাররা মাছ কেনা বন্ধ রাখে। আড়তদাররা মাছ বিক্রি করতে আসা চাষিদের কাছ থেকে শতকরা ৪ টাকা এবং মাছবাহী গাড়ির জন্য ৫০ টাকা খাজনা নিয়ে থাকে।
শহরের পলিটেকনিক কলেজপাড়া এলাকার মাছচাষি সাগর বলেন, তার কয়েকটি পুকুরের আয়তন প্রায় ১০ বিঘা। প্রায় এই বাজারে মাছ বিক্রি করতে আসেন। ডিজিটাল মিটার চালু হওয়াতে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়েছে। ডিজিটাল হলে ঘাটতি যাবে না। ওজন মিটারে দেখা যায়। কিন্ত পুরোনো আমলের কাটার পাল্লা হলে আমরা বুঝতে পারি না। সামনের দিকে একটু হেলে যাওয়া মানে কয়েক কেজি বেশি মাছ চলে যাওয়া। ডিজিটাল হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। আগে কাটার ওজনে যেহেতু ৪২ কেজিতে মণ ছিল ডিজিটাল মিটারে ৪৩ কেজিতে মণ হলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
পৌর মাছ বাজারের পাইকার ফেরদৌস প্রামানকি বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির ৫০০ কেজির মতো মাছ কেনা হয়। স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি ঢাকায় পাঠানো হয়। আগে কাটাতে ৪২কেজি মণ হিসেবে কেনা হয়। হঠাৎ করে রোববার আড়তে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে ওজনে ঠিক পাব না। কিছুক্ষণ পর ওই মাছ আবার ওজন করা হলে ওজন কমে যাবে। এখন ক্যারেটে পানিসহ ওজন করা হলে আমাদের জন্য লোকসান হবে। আর আগে কাটাতে মাছ কেনা হতো। যা বাঁশের ঝুঁড়িতে করে ওজন করা হতো। পানিও দ্রুত নেমে যেত। যেহেতু ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু হয়েছে সেহেতু ৪২ কেজির মণের জায়গায় আরও এক কেজি বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হতো।
নওগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও আড়তদার সমিতির উপদেষ্টা শরিফুল ইসলাম বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। কিন্তু গুটিকয়েক পাইকারের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। চাষিরা মাছ বিক্রি করতে আসলে তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়। তারা একটি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। পাইকাররা যদি ডিজিটালে বিক্রি করতে পারে তাহলে আমরা আড়ৎদাররা কেন বিক্রি করতে পারব না। এসব সমস্যা সমাধান না হলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে।
পৌর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গৌতম হাওলাদার ভুট্টু বলেন, ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি করা নিয়ে কয়েকদিন আগে পাইকারদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। ১ অক্টোবরের মধ্যে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য প্রশাসন থেকে যে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। কিন্তু পাইকাররা তা মানতে নারাজ। এখানে ২২টি আড়তে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। পাইকাররা সিন্ডিকেট করছে। বাইরে থেকে যেসব পাইকার মাছ কিনতে আসছে তাদের মাছ না কিনতে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে মাছচাষিরা এখানে মাছ বিক্রি করতে আসবে না। তখন সবার জন্যই সমস্যা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ বলেন, আড়তদাররা ডিজিটাল মিটার চালু করার জন্য আমাকে অবগত করেছিল। তাদের বলা হয়েছিল জনগণ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করা হলে স্বচ্ছতা থাকে। যেহেতু ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করা নিয়ে বিড়ম্বনার শুরু হয়েছে তাই দুই পক্ষকে (আড়তদার ও পাইকার) নিয়ে বসে বিষয়টি দ্রুত সমাধানসহ ডিজিটাল মিটার চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করব।
এইউ