সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
৩৫ বছরেও সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয় পার্টি। একের পর এক আহ্বায়ক কমিটি হলেও প্রত্যক্ষ ভোট করতে ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কমিটি না থাকায় শহরের পুরাতন রেলস্টেশন পাড়ার কার্যালয়টিও বেশির ভাগ সময় থাকে তালাবদ্ধ। দেখা যায় না দলীয় কোনো কার্যক্রম।
সম্মেলন না হওয়ার কারণ হিসেবে অর্থের বিনিময়ে অসাংগঠনিক নেতাদের পদায়ন, গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কর্মকাণ্ড এবং দায়িত্ব পাওয়া জেলা নেতাদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী। তাদের কারণেই গত দুই নির্বাচনে জেলার চার আসনের তিনটিতেই জাতীয় পার্টির ভরাডুবি ঘটেছে বলে দাবি তাদের।
১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে প্রথমবারের মতো জেলা কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় সফিকুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতি ও আকতার হোসেন বুলু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ধাপে ধাপে বিভিন্ন সময় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে চলে দলটির কার্যক্রম। জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে কতবার আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জেলার কোনো নেতাই তা বলতে পারেননি।
২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জেলা জাতীয় পার্টির ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন। তিন মাস মেয়াদের এ কমিটি চলে পাঁচ বছর। চলতি বছরের ২৮ জুন পার্টির দপ্তর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। সেখানে ফের এ কে এম মোস্তাজিুর রহমান মোস্তাককে আহ্বায়ক এবং অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করা মেজর (অব.) আব্দুস সালামকে সদস্য সচিব করা হয়।
এ কমিটি থেকে পার্টির ত্যাগী নেতাকর্মী, সাবেক জেলা সদস্য সচিব, অনুমোদিত বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা কমিটির আহ্বায়ক, সভাপতি, সদস্য সচিব, সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীলদের বাদ দেওয়া হয়। এমনকি জেলার চারটি আসনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত আসন্ন জাতীয় সংসদের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের নাম পর্যন্ত নেই। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে কেন্দ্রের অসংগতিপূর্ণ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও সম্মেলন করতে না পারায় প্রস্তুতি কমিটির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে দেওয়া সম্মেলন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব দায়িত্ব পাওয়ার পর বিদেশে চলে গেছেন। একা হয়ে পড়েছেন আহ্বায়ক। আদৌ সম্মেলন হবে কিনা– তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। জেলা নেতাদের নীরবতায় ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কুড়িগ্রামের চারটি আসন হারাতে পারে দলটি– এমন আশঙ্কা ত্যাগী নেতাদের।
জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্য সচিব এস কে বাবু আহম্মেদ বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে জেলা কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান পাতানো কমিটি করেছেন। কমিটিতে আমেরিকার নাগরিক আ খ ম আনিছুর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং অস্ট্রেলিয়ায় থাকা মেজর (অব.) আব্দুস সালামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। পার্টিতে কোনো অবদান নেই তাদের। কোনো কর্মসূচিতে আসেন না তারা।
জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সন্ডে বলেন, কমিটি না হওয়ার পেছনে জেলা নেতারাই দায়ী। জেলার আহ্বায়ক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক চার বছরে দলীয় কিংবা জাতীয় দিবসের কর্মসূচিতে মিটিংয়ে আসেন না। নেতাকর্মীর খোঁজখবর নেন না। প্রবীণ নেতাদের অনেককেই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ সব কারণে বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। এভাবে একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল চলতে পারে না।
রাজারহাট উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মো. আব্দুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, ১০ বছরে জেলা কমিটিতে থাকলেও ব্যক্তিবিদ্বেষের কারণে আমাকে এবার কমিটিতে রাখা হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকের সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা করা হয়। তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও সদর উপজেলার ত্যাগী নেতাকর্মীকে পদবঞ্চিত করা হয়েছে। তারাই চলতি মাসে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে। এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মেজর (অব.) আব্দুস সালাম বলেন, শিগগির জেলা শাখার সম্মেলন করে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে।
এইউ