সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মানবপাচার মামলায় সর্বোচ্চ সাজার সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ মামলা আদালতের বাইরে আপোস-মীমাংসা হয়ে যায়। এজন্য আদালতে অভিযুক্তদের সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। একই সঙ্গে মানবপাচার মামলা দায়েরে ত্রুটি ও চার্জশিটের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত নেওয়া হয় না। ফলে আসামিরা আপোস-মীমাংসা, এজাহার ত্রুটি ও চার্জশিটের দুর্বলতার সুযোগে সাজা থেকে মাফ পেয়ে যায়। অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করতে হলে পুলিশ ও পাবলিক প্রসিকিউটরদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। সমন্বিত উদ্যোগ নিতে পারলে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে যশোর শহরের একটি অভিজাত হোটেলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রাইটস যশোর আয়োজিত শিশু সুরক্ষায় ‘মুক্তি সাউথ এশিয়া প্রজেক্ট’র পরিচিতি সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাইটস যশোরের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী মোল্লার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, মানবপাচার ও শিশু নির্যাতন বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতার বিকল্প নেই। মানবপাচারের শিকার অধিকাংশ ভিকটিম প্রান্তিক পর্যায়ের। প্রান্তিক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
শিশু সুরক্ষা বিষয়ক নতুন প্রকল্প বিষয়ে আলোচনা সভায় বিচারক, পুলিশ, আইনজীবী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মীরা শিশু সুরক্ষা ও মানবপাচার প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. সেতারা খাতুন বলেন, মানবপাচার মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাদী, সাক্ষী ও ভিকটিমকে আদালতে হাজির করা কঠিন হয়ে যায়। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক সময় ভিকটিম ও বাদী মূল অভিযোগ পাস কাটিয়ে যায়। আসামিদের সঙ্গে আদালতের বাইরে আপোস করে ফেলে। ফলে বিচারে সাজা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়। একই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা মানবপাচার মামলায় চার্জশিট আদালতে দাখিল করার আগে পাবলিক প্রসিকিউটরদের মতামত নেন না। কিন্তু মতামত নেওয়ার নিয়ম আছে।
শিশু আদালতে বিচারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মামলায় শিশুদের বয়স অনুমান করে বসিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী বয়স উল্লেখ করলে ভালো হয়। এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর বলেন, চার্জশিট প্রদানে পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত নেওয়ার নিয়ম থাকলে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। সেই নিয়মের আলকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, অভিভাবকহীন শিশুদের ক্ষেত্রে অনুমান কিংবা ভাষ্য অনুযায়ী বয়স এজাহারে উল্লেখ করা হয়। তবে আমরা চেষ্টা করি জন্মসনদ অনুযায়ী বয়স নির্ধারণের।
যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের আরেক পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, মানবপাচারের অনেক মামলায় বাদী, ভিকটিম, সাক্ষী সবই ভুয়া পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে পাচারকারী নিজেই মামলার বাদী হয়ে যান। এসব মামলায় সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
যশোরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফাহমিদা জাহাঙ্গীর বলেন, যশোরে মানবপাচার সংক্রান্ত মামলার পরিমাণ অনেক বেশি। যশোরে পৃথক মানবপাচার দমন ট্রাইন্যুাল চালু করা প্রয়োজন। বর্তমানে অন্য একটি ট্রাইব্যুনালে সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মানবপাচার মামলার বিচার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ দেখতে চাই, যেখানে কোনো শিশু পাচার হবে না। সমাজে সেই সুরক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে ।
আরও বক্তব্য রাখেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. ইসহাক, যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ, প্রবেশন অফিসার আবদুল ওহাব, হৈবতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক, চাঁচড়া ইউপি চেয়ারম্যান শামীম রেজা, সাংবাদিক ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, নূর ইসলাম, সরোয়ার হোসেন, মনিরুল ইসলাম, ইন্দ্রজিৎ রায়, এনজিও প্রতিনিধি শাহনাজ পারভীন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রাইটস যশোরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এসএম আজহারুল ইসলাম।
এইউ