সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
অসংখ্য দিবস আমরা পালন করে থাকি। সরকারি বা বেসরকারি, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক। এসবের বাইরেও কিছু দিবস আমাদের জানার বাইরে থাকে যার তাৎপর্য কোন অংশেই কম নয়। এরকম একটি দিবস হল চা-শ্রমিক দিবস বা মুল্লুক চলো দিবস।
উন্নত জীবনযাপনের ব্রিটিশ বেনিয়াদের প্রলোভনে জন্মভুমি ছেড়ে বাংলাদেশের চা বাগানে কাজ করতে আসে একদল মানুষ। কিন্তু কাজে এসে তাদের স্বপ্ন ভেঙে যায়। স্বপ্নভঙ্গের জ্বালা নিয়ে তারা ফিরে যেতে চায় নিজ জন্মভিটায়। এজন্য ডাক দেওয়া হয় মুল্লুকে চলো (দেশে চলো) আন্দোলনের।
১৯২১ সালের ২০ মে। চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে পিতৃপুরুষের আদি ঠিকানায় ফিরে যেতে চাওয়া চা শ্রমিকদের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্যরা। মৃত্যু হয়েছিল কয়েক হাজার চা শ্রমিকের। এর পর থেকে প্রতি বছরই দিনটিতে নিহত সে শ্রমিকদের স্মরণ করা হচ্ছে। পালন করা হচ্ছে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে। মুল্লুক চলো বা নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন এ দেশের চা জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে এক গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায়। শতবছরের বেশি সময় পেরোলেও আজও দিবসটির সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি।
১৮৫৪ সালে তৎকালীন অবিভক্ত আসাম বর্তমানে সিলেটে চায়ের বাগানের সিংহভাগের দখলে ছিল ব্রিটিশ বণিকরা। মাইলের পর মাইল বিশাল চা বাগানে কাজ করবার জন্য বিহার,উড়িষ্যা,অন্ধ্রপ্রদেশ,উত্তর প্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিচু বর্ণের হিন্দু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনকে নানা প্রলোভনে চা বাগানে নিয়ে আসা হয়। যদিও কিছুদিনের মধ্যেই তা পরিণত হতো দুঃস্বপ্নে। বিশাল পাহাড় ও বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে বাগান তৈরি করতে গিয়ে মারা পড়েন অনেকে। খাটুনিও ছিল অমানুষিক। জীবনযাত্রাও ছিল মানবেতর।
একপর্যায়ে পণ্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত ও দেওশরণ ত্রিপাঠির নেতৃত্বে মুল্লুকে ফেরার প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক দুঃসহ জীবনের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার লাভের আকাঙ্খায় সিলেট থেকে পায়ে হেঁটে নিজ দেশের উদ্দেশে বের হন । পায়ে হেটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। সেখানে ব্রিটিশ গোর্খা সৈনিকরা নির্বিচারে গুলি করে শত শত চা শ্রমিককে হত্যা করে মৃত দেহ মেঘনায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর বাধ্য করানো হয় চা বাগানের বস্তিতে প্রত্যাবনের জন্য। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ এই সময়ে আজো অজানা ঠিক কত সংখ্যক চা শ্রমিককে সেদিন হত্যা করা হয়েছি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী বলেন, ঘটনার পর পেরিয়েছে ঠিক ১০৩ বছর।ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে পাকিস্থান এর পর স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে অনেক। কিন্তু বদলায়নি চা শ্রমিকদের জীবন মান। সারা দিনের খাটুনির পর বাগানে মজুরি মিলছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানিসহ মৌলিক সব সূচকেই পিছিয়ে চা শ্রমিকের জীবন।
২০ মে চা শ্রমিকদের গণহত্যা দিবসটি পালনে বাগান মালিকদের রয়েছে অনীহা উল্লেখ করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, চা শিল্পের আকাশচুম্বী উন্নতি হলেও চা শ্রমিকদের নির্মম গণহত্যার শত বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেছে। এখনো রাষ্ট্রীয় ভাবে চা শ্রমিক দিবসটি পালনের স্বীকৃতি আজো উপেক্ষিত।
দেশে চা জনগোষ্ঠীর সদস্য সংখ্য প্রায় ৮ লাখ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই মানুষেরা চা শ্রমিকের কাজ করে যাচ্ছে। সময়ের সাথে সংগতি রেখে শুধু মজুরী নয়, জীবনযাত্রার অন্যান সূচকে অনেক পিছিয়ে চা জনগোষ্ঠী।
এম