দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কখনো রাস্তার পাশের কোন বাড়িওয়ালা, কখনো ঔষুধের দোকান মালিক, কখনো রাস্তার পাশের দোকান মালিক কখনো বালু ব্যবসায়ী, আবার কখনো জনপ্রতিনিধিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিয়ে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদারীপুরের শিবচরে একটি প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। বিষয়টি সেনাবাহিনী ও পুলিশের নজরে এলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অবশেষে এই চক্রের মূলহোতা জাহাঙ্গীরসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। চক্রের মূলহোতা জাহাঙ্গীর পুলিশ ও আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এই চক্রের আরো সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে বলে শুক্রবার রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান সহকারী পুলিশ সুপার মো. আজমীর হোসেন। এসময় শিবচর থানার ওসি মো. রতন শেখ (পিপিএম) উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, গত নভেম্বর থেকে শিবচর থানা পুলিশ বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারে একটি প্রতারক চক্র উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে ফোন করে সেনাবাহিনীর মেজর মাসুদ পরিচয় দিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পুলিশ চক্রটি শনাক্তে কাজ শুরু করে। এরই মাঝে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবচর পৌরসভার হাতির বাগান মাঠ এলাকার নাসরিন আক্তার মায়া নামের এক নারীর মোবাইল নম্বরে প্রতারক চক্রের এক সদস্য ফোন করে সেনাবাহিনীর মেজর মাসুদ পরিচয় দিয়ে বাদীকে বলে, হাতির বাগান মাঠের মোড়ে আপনাদের যে দোকান আছে সেটা সরকারি জায়গার ওপর পড়েছে। সেই দোকানের টিনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর গাড়ি লেগে গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙ্গে গেছে। তাই গ্লাস মেরামতের জন্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা এখুনি দিতে হবে। নয়তো আপনার সমস্যা হবে। ভয় পেয়ে ওই নারী সঙ্গে সঙ্গেই প্রতারকদের দাবিকৃত টাকা নগদ এর মাধ্যমে দিয়ে দেয়। প্রতারক চক্রটি ওই নারীকে একাধিক বার ফোন করে তিন দফায় মোট ৮ হাজার টাকা নেয়। পরবর্তীতে ফোনে আরও টাকা দাবি করলে সন্দেহ হওয়ায় ভুক্তভোগী নারী শিবচর সেনাবাহিনী ক্যাম্পে গিয়ে বিষয়টি জানালে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দিলে ওই নারীর ছেলে শিবচর থানায় একটি জিডি করেন।
এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও শিবচর থানা পুলিশ এই প্রতারক চক্রটি ধরতে শক্তিশালী টিম নিয়ে মাঠে নামে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটি শনাক্ত করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে চক্রের মূলহোতা শিবচর পৌরসভার ডিসি রোড এলাকার ছিরু সেখের ছেলে জাহাঙ্গীর শেখ (৩৫), একই এলাকার শংকর মালোর ছেলে সিমান্ত মালো (২০) ও পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কুদ্দুস শিকদারের ছেলে কাওছার শিকদারকে (২১) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মাদারীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই চক্রটি বিভিন্ন মানুষের নামে ভুয়া সিমকার্ড তুলে তা দিয়ে প্রতারণা করত একেক সময় একেক নম্বর ব্যবহার করতো চক্রটি বলেও পুলিশ জানায়।
প্রতারক চক্রের মূলহোতা মো. জাহাঙ্গীর শেখ বলেন, আমরা ঘুরে ঘুরে প্রথমে দেখতাম কার বাড়ি রাস্তার, কার দোকান রাস্তার পাশে, বা কাকে ভয় দেখালে টাকা পাওয়া যাবে। পরে ফোন করে মেজর পরিচয় দিয়ে টাকা চাইতাম। ওরা বিকাশ আবার নগদে টাকা দিত।
মাদারীপুর সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আজমীর হোসেন বলেন, প্রতারক চক্রটি সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষকে মোবাইলের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যৌথ বাহিনীর সহায়তায় ও তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা অবশেষে চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এই চক্রের বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। চক্রের মূলহোতা আমাদের কাছে ও আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
এফএইচ/