সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে অভিনব কায়দায় সরকারি কোষাগারের ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রের মুল হোতা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হিসাব সহকারী ইমরান নাজির জালিয়াতির তথ্য ফাঁসের পরই পাড়ি জমিয়েছে দুবাই। এ ঘটনা কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরই শোকজ পরবর্তীতে হিসাব সহকারী ইমরান নাজিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই বলে সাফ জানিয়েছেন জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের ডিএএফও নজরুল ইসলাম।
এ ঘটনায় জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হিসাব সহকারী ইমরান নাজির, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের ডিএএফও (ডিস্ট্রিক্ট অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার) মো. নজরুল ইসলাম ও সুপার দেওয়ান ফেরদৌস ওয়াহিদসহ মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ৬ সদস্য ও ইমরান নাজিরের আত্মীয়স্বজনসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে সিনিয়র স্পেশাল আদালতে মামলা করেছেন দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সুজন শিকদার। মামলাটি তদন্তের জন্য স্পেশাল জজ আদালত থেকে পাঠানো হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ধোকরাকোল গ্রামের মৃত নাজমুস সাহাদতের ছেলে ইমরান নাজির ২০১৮ সালে মানিকগঞ্জ জজকোর্টের মাধ্যমে চাকরিজীবন শুরু করেন। পাঁচ বছর পাঁচ মাস ধরে নজিরবিহীন এ জালিয়াতি চললেও চাঞ্চল্যকর তথ্যটি ফাঁস হয় নভেম্বরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৮ জুলাই ২০১৯ সাল থেকে ২২ আগস্ট ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইমরান মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকদের স্বাক্ষর জাল করে প্রিয়েমশন (অগ্রক্রয়াধিকারমূলক অধিকার হলো কোনো ক্রেতার কাছ থেকে আবার ক্রয়ের অধিকার) এর জমাকৃত অর্থ ও বিভিন্ন মামলার অর্থ ভুয়া পেমেন্ট অর্ডার তৈরি করে শতাধিক মানুষের নামে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৭ টাকা তছরুপ করে জালিয়াত চক্রটি। এ জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে ৬ নারীসহ জড়িত রয়েছে স্ত্রীর ভাই, আপন ফুপা, ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ব্যক্তিগত গাড়িচালক, আদালত পাড়ার সুযোগ সন্ধানী ৬ আইনজীবী। শুধু ৬ আইনজীবীর অ্যাকাউন্টেই সরকারি কোষাগারের ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাচার হয়েছে। পাঁচ বছর পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন পারিবারিক মামলা, এনআইঅ্যাক্ট (চেক ডিজঅনার) মামলার গচ্ছিত মামলার টাকা সরকারি কোষাগার থেকে পর্যায়ক্রমে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জজ কোর্টের হিসাব সহকারী একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ২১ জনের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের নামের হিসাবে ২১ লাখ থেকে শুরু করে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ভুয়া পেমেন্ট অর্ডার বানিয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসের যোগসাজশে চেক ইসু করে ব্যাংক থেকে তুলে নেয় চক্রটি। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সরকারি কোষাগার থেকে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৭ টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ১লা সেপ্টেম্বর ইমরানকে শোকজ করা হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে ইমরান স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ স্বীকার করেন। পরবর্তীতে হিসাব শাখার ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইমরানের কারণ দর্শানোর জবাবের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয় জানিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থার চিঠি পাঠান। এরপরই জেলা ও দায়রা জজ আসামি ইমরানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন। অভিযোগ গুরুতর বিবেচনা হওয়ায় ১৮ সেপ্টেম্বর ইমরানকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন।
ইমরানের স্ত্রী আফিফা জানিয়েছেন , কেলেঙ্কারির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পরপরই ইমরান দুবাই চলে যান । ইমরান বর্তমানে দুবাইতে তিনি ব্যবসা করছেন।
আফিফা জানান, ইমরানের চাচাতো ভাই হাবিবুর রহমান (২০ নম্বর আসামি) এবং বন্ধু শরীফুল ইসলাম (১১ নম্বর আসামি) এর মূল হোতা। এদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যত টাকা তোলা হয়েছে সব তারাই নিয়ে চম্পট দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত টাকার বিষয়ে আমি সব সময় জিজ্ঞেস করতাম ইমরান বলত চাকরির বাইরে তার জমিজমা এবং গাড়ির ব্যবসা আছে। এগুলো সব তার ব্যবসার টাকা। কিন্তু এই বিষয়গুলো আমি জানি না। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে যত টাকা তোলা হয়েছে সব তাকে দিয়ে দিয়েছে। আমি ইমরানের অপকর্মের দায় কেন নেব? তাছাড়া হাবিবুর রহমান এবং শরীফুল ইসলাম ছাড়া তার অপকর্মের কথা কেউ জানত না।
চক্রের বিরুদ্ধে করা মামলার আইনজীবী সামিউল মাহমুদ রাকিব জানান, দুর্নীতি দমন আইন, মানিলন্ডারিং ও দন্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলা তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মানিকগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আজিজ উল্লাহ বলেন, আমার প্রায় ৫০ বছর আইন পেশায় কখনো শুনিনি কোর্টের টাকা আত্মসাৎ করা যায়। ঘটনাটি পুরো বিচার বিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে।
জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নূরতাজ আলম বাহার বলেন, এটা তো সরকারি টাকা এবং বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত টাকা। এ ঘটনার সঙ্গে যেসব আইনজীবীর নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে বারের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
এফএইচ