সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস পর মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় ভিড় জমান মোটরসাইকেল আরোহীরা।
সকাল সাড়ে ৭টায় পদ্মা উত্তর থানা এলাকায় দেখা যায়, মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। একটু একটু করে মোটরসাইকেল গুলো মাওয়া টোলপ্লাজা দিকে এগোচ্ছিল। মোটরসাইকেল আরোহীদের বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় অনেক যাত্রীকে পুলিশকে হাসিমুখে সালাম দিতে দেখা যায়। আবার পুলিশও তাদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটের দিকে টোল আদায় করে পদ্মা সেতু পাড়ি দেওয়ার সুযোগ করা হয় মোটরসাইকেল আরোহীদের। তবে এর আগেই সাহরি খাওয়ার পর থেকে মাওয়া টোলপ্লাজা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। ভোরের আলো ফোটার আগেই পদ্মা সেতুর উত্তর থানা থেকে টোলপ্লাজা পর্যন্ত মোটরসাইকেল আরোহীদের দীর্ঘ সারি লেগে যায়। প্রথমে একটি বুথ দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছিল। মোটরসাইকেলের চাপ থাকায় পরবর্তীতে দুটি বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করা হয়।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে স্ত্রী ও বাচ্চাকে মোটরসাইকেলে করে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসেছেন মোহাম্মদ সোহেল নামে এক ব্যক্তি। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে বরিশালের গৌরনদী এলাকায় যাবেন তিনি।
সোহেল বলেন, ‘ঈদের আগেই আমাদের ঈদের খুশি শুরু হয়ে গেছে। গতকাল সারা রাত ঘুমাইনি। কখন সকাল হবে, পদ্মাসেতুতে উঠে বাড়ি যাব। ভোরে মাওয়া এসেছি। টোলপ্লাজায় এসেই অল্প সময়ের মধ্যে সেতুতে ওঠার সুযোগ পেয়েছি। এই প্রথম সড়ক পথে কোনো ভোগান্তি ছাড়া বাড়ি যাচ্ছি। খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
শুধু সোহেল নয় পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াত করা প্রত্যেকটি মোটরসাইকেল আরোহীর চোখ-মুখে এমন খুশির ছাপ দেখা যায়। পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে সবার মধ্যে।
রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাকিল। তিনি খুলনা যাবেন। জানতে চাইলে শাকিল বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব। ভোরে নামাজ শেষে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যে মাওয়া চলে এসেছি। পদ্মা সেতুতে বাইক পারাপার শুরু না হলে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হতো। মানিকগঞ্জ দিয়ে ঘুরে খুলনায় যেতে হতো। পদ্মা সেতু দিয়ে এখন খুব সহজেই অল্পসময়ের মধ্যে গ্রামের বাড়িতে যাব। সেখানে ঈদ করব। এর চেয়ে বেশি খুশি মনে আর কিছুই হতে পারে না।’
টোলপ্লাজার সামনে কথা হয় বরিশালের গৌরনদী এলাকার বাসিন্দা তামান্না আক্তারের সঙ্গে। স্বামীর সঙ্গে রাজধানীর মিরপুর থেকে এসেছেন তিনি। তামান্না বলেন, ‘মোটরসাইকেলে চড়ে এটিই প্রথম আমার বাড়ি যাওয়া। মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ায় আমরা খুব খুশি। আমরা চাই দু-একজনের ভুলে যেন আবারও পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়ে না যায়।’
পদ্মা উত্তর থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আজ ভোরের আলো ফোটার আগেই মোটরসাইকেল আরোহীরা সেতু এলাকায় আসতে থাকেন। এ সময় পদ্মা উত্তর থানা থেকে সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত ২০০ মিটার এলাকায় মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি ছিল। মোটরসাইকেল আরোহীরা নিয়ম মেনে টোল পরিশোধ করেন। ভোরে চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ কমতে থাকে।’
পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজ্জব আলী বলেন, ‘যানবাহন আসা মাত্রই টোল পরিশোধ করে সেতু পারি দিতে পারছে। কোথাও কোনো চাপ নেই। সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে। সকালের দিকে মোটরসাইকেলের অনেক চাপ ছিল। তখন দুইটি বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করা হয়। সকাল ৮টার পর চাপ কমতে থাকে। তখন থেকে আবার একটি বুথ দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। যদি আবারও চাপ বাড়ে সে ক্ষেত্রে দুটি দিয়ে আদায় করা হবে।’