সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
অভাব অনটনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুদে টাকা ধার দিয়ে গরীব-অসহায় ও জেলে সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মো.রবিন মিয়া নামে এক সুদি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। নির্যাতন আর প্রশাসনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগীরা।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জের কৈতরা এলাকায় সুদি ব্যবসায়ী রবিন মিয়ার নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে মানববন্ধন করেছেন মাঝিপাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশত ভুক্তভোগীরা।
মানববন্ধনে কৈতরা হিন্দু সম্প্রদায়ের জেলে পরিবার ছাড়াও ভুক্তভোগী পরিবার ও জেলা হিন্দু মহাজোটের নেতাকর্মী অংশ নেন।
সুদি ব্যবসায়ী রবিন মিয়া সদর উপজেলার মিতরা এলাকার ফরহাদ মিয়ার ছেলে।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা জানান, সংসারে অভাট অনটনের কারণে সুদি ব্যবসায়ী রবিন মিয়ার কাছ থেকে স্বল্প সুদে টাকা নেন মিতরা ও কৈতরা এলাকার অর্ধশতাধিক হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের গরীব নারী-পুরুষ। কথা অনুযায়ী প্রতিমাসে সুদের টাকাও পরিশোধ করছেন। পর্যাক্রমে সুদসহ মূল টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু অভাবের কারণে হাতেগোনা কিছু সুদের টাকা বাকি থাকে। আর সেই টাকার জন্য ভুক্তভোগীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন সুদি ব্যবসায়ী রবিন মিয়া। এমনকি সময়মত টাকা দিতে না পারায় অনেকের বাড়ির আসবাবপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুদের টাকা দিতে না পারায় নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ভুক্তভোগী গোপী রাজবংশী জানান, প্রায় দুই বছর আগে রবিন মিয়ার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিই। প্রতিমাসে সুদের টাকা পরিশোধ করছি। রবিনের কাছ থেকে আনা আসল ৭০ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হইছে। মাত্র সুদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া বাকি ছিল। বাকি সুদের টাকার জন্য আমাকে বেশ কয়েকবার মাধর করেছে রবিন এবং এখন ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ লাখ টাকা দাবি করছে রবিন মিয়া। এখন মার খাওয়ার ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
ভুক্তভোগী ইয়াসমিন হাসান জানান, সংসারে অভাবের কারণে রবিনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। ২০ হাজার টাকায় প্রায় লক্ষাধিক টাকা সুদ দিয়েছি। মাঝখানে সুদের টাকা দিতে না পারায় জোর করে আমার কাছ থেকে একটি খালি চেকে স্বাক্ষর নিয়েছে এবং আদালতে আমার নামে ৯ লাখ টাকার মামলা করেছে। আমার ঘরের খাট ও বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে গেছে রবিন। রবিনের নির্যাতনের ভয়ে আমি স্কুলের চাকুরি ছেড়ে, আমার ৪ মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে ছিলাম। এখনও রবিন বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখিয়ে আসছে। রবিনের নির্যাতনের বিষয়ে প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাই। যাতে করে আমার সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারি।
আরেক ভুক্তভোগী সাধন রাজবংশী জানান, সুদের টাকা বা আসল টাকা দিতে দেরি হলে জোর করে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেয় রবিন মিয়া। এরপর ইচ্ছেমতো টাকার বসিয়ে মামলা করে। অনেক সময় থানার পুলিশ দিয়ে ভয় দেখায়। বরিনের সাথে পুলিশের ভালো সম্পর্ক থাকায় মাঝে মধ্যেই আমাদের মাঝিপাড়ায় পুলিশ নিয়ে আসে। রবিনের নির্যাতন আর পুলিশের ভয়ে কিছু বলতেও পারি না। একজন প্রতিবাদ করছিল, রবিন ও তার লোকজন তাকে মারধর করেছে।
নির্যাতনের শিকার কৈতরা মাঝিপাড়ার হরি রাজবংশী জানান, সুদের টাকা লেনদেন নিয়ে মাঝে মধ্যেই মাঝিপাড়ার জেলে ও মহিলাদের নির্যাতন করতো রবিন মিয়া। নির্যাতনের সময় বাধাঁ দিতে গেলে রবিন আমাকে গালাগাল করেন হুমকি দেয় এবং মাছের মালিকদের কাছে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পাওয়ার পথে রাস্তায় আামকে একা পেয়ে মারধর করে। এসময় আমার কাছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৮০ টাকা ছিনিয়ে নেয় রবিন মিয়া।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুদি ব্যবসায়ী মো.রবিন মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার জানান, যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএইচ