সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শেরপুর-১ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে রেখেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান আতিক। তিনি পাঁচবারের এমপি এবং জাতীয় সংসদে দুইবারের হুইপ। এবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু। আর এই চ্যালেঞ্জে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে দীর্ঘদিন পর পরাজয়ের স্বাদ নিলেন তিনি।
নির্বাচন শেষে গত রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল খায়রুম স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানুয়ার হোসেনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। এতে ছানু পেয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৩ ভোট। আতিক পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৩৭ ভোট।
হুইপ আতিউর রহমান আতিকের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে জনপ্রিয় নেতাদের কোনঠাসা করে রাখা, সিনিয়র নেতাদের মূল্যায়ন না করা, শেরপুরের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়া, পরিবারের লোকজনের নানারকম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া ইত্যাদিকে দায়ী করছেন শেরপুরের সচেতন মহল।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেন তিনি। এতে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনপ্রিয় নেতা ছানুয়ার হোসেন ছানুকে সাধারণ সদস্য করা হয়। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত পরবর্তী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ছানু। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েই তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যান। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের অপর জনপ্রিয় নেতা সাবেক কমিটির ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র হুমায়ূন কবির রুমানকে পরবর্তী পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন না দিয়ে কোণঠাসা করে রাখার কৌশল গ্রহণ করেন। পরে গত দুইবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনেও তাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু পরপর দুইবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে হুমায়ূন কবির রুমান দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পালকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন থেকে জেলা যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে বিভক্ত করে রাখেন আতিউর রহমান।
জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার পক্ষের লোক না হওয়ায় কৃষক লীগকে কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি।
এদিকে ২০১৮ সালের পর থেকেই দীর্ঘ আট বছর ধরে শেরপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আতিকের সঙ্গে ছানুর দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। এবার নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় ছানুয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ফলে আতিউর রহমান ও ছানুয়ার হোসেনের পক্ষ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানুয়ারের পক্ষ নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠে নামেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শামছুন্নাহার কামাল, পৌরমেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, যুবলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিজু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম সম্রাটসহ দলের বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। এদিকে দলের অপেক্ষাকৃত কয়েকজন তরুণ নেতা ছাড়া আতিউর রহমানের পক্ষে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে প্রচারে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
নির্বাচনে আতিউর রহমানের পরাজয়ের কারণ জানতে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচনে পরাজয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আতিউর রহমানের নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের আহ্বায়ক চন্দন কুমার পাল।
জেবি