সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
সরকার পতন, নির্দলীয় তত্ত্বাবায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ঝিনাইদহ থেকে রোডমার্চ শুরু হয়। মাগুরা ঘুরে বিকেলে যশোর শহরের মুড়লী মোড়ে এসে পৌঁছায়। পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, আমরা আগের মতো আর ভোট করতে দেব না। যেদিন আমরা এই জালিম সরকারের পতন ঘটাতে পারব, সেদিন এই রোডমার্চের সমাপ্তি হবে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, আমরা বার বার শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। শুধু বিএনপি নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দল বলেছে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হলেও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধা ও লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির আন্দোলনও হবে ডু আর ডাই। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করতে চাই। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই। জনগণ যদি মুক্ত হয়, খালেদা জিয়াও মুক্ত হবে। গণতন্ত্র মুক্ত না হলে খালেদা জিয়া মুক্ত হবে না। তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল, সেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র শেষ করেছে শেখ হাসিনা। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত আমরা মার খাচ্ছি। আর মার খাওয়ার সময় নেই। আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত দিতে হবে। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে মানুষকে আঘাত করলে কেমন ব্যথা লাগে! এই আঘাত গনতান্ত্রিক, এটা অন্যায় নয়! কেননা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে।
গয়েশ্বর বলেন, আমার মতো মানুষকেও আজকাল মাথায় বাড়ি দিয়েছে। তার পরেও পথ ছেড়ে চলে গেছি! না। পথেই যেহেতু নেমেছি, পথেই দাবি আদায় করেই বাড়ি ফিরব। সুতরাং যুদ্ধের মতো প্রস্তুত হন। ওদের হাতে আছে লাঠি, আমাদের মা বোনদের হাতে ঝাড়ু। ওদের ঝাড়ু মেরে বিদায় করতে হবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের শত্রু, জনগণের শত্রু। নারী, মুদ্রা পাচারকারী, গুম-খুন হত্যাকারী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। তাই স্লোগান হবে হঠাও হাসিনা; বাঁচাও দেশ।
আরেক বিশেষ অতিথি দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আপনাদের সময় শেষ। জনগণ রাজপথে নেমেছে। পালানোর সময় পাবেন না। ভালোই ভালোই মুক্তি দেন। তা না হলে জেলখানা ভেঙে বাংলার মানুষ বাংলার নেত্রীকে মুক্ত করবে। এটাই প্রথম, এটাই শেষ দাবি। পদত্যাগ (শেখ হাসিনা) আপনাকে করতে হবেই। আর কয়েকদিন পরেই বিএনপির সময়। দেশ কিভাবে চলবে ঠিক করবে বিএনপি।আর কয়েকদিন পরেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সিংহাসনে বসবেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান আসবেন বীরের বেশে। লাখ লাখ মানুষ বিমানবন্দরে শুভেচ্ছা জানাবে। পথসভায় বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরি, চেয়ারম্যানের উপদদেষ্টা সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল প্রমুখ। সঞ্চলনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও মিজানুর রহমান খান। এর আগে সকালে ঝিনাইদহ থেকে শুরু হয় এই রোডমার্চ। এরপর মাগুরা-যশোর সড়কের শেখপাড়া মসজিদের সামনে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহাসড়কে প্রায় আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পথসভায় মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
বিএনপি নেতারা জানান, মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়ায় আরও একটি পথসভা শেষে যশোরের বাঘারপাড়ার পুলেরহাট বাজারে পথসভা করে নেতৃবৃন্দ। এরপর যশোর শহরের মুড়লি ও অভয়নগরে পথসভা করে খুলনা অভিমুখী যায় রোডমার্চটি। কয়েক হাজার পিকআপ, ট্রাক ও বাস ছাড়াও শতাধিক মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে ১০-১৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে এই রোডমার্চটি খুলনা খুলনার শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সেখানে জনসভায় নেতারা ভাষণ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রোডমার্চ শেষ করবেন।
যশোর মুড়লী মোড়ে সমাবেশ শুরুর পর উপস্থিত নেতাকর্মীদের নজর কাড়ে খালেদা জিয়ার প্রতীকী কারাগার। এর ভেতর থেকে একটি শিশু খালেদা জিয়া সেজে সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল। একটি পিকআপের ওপরে প্রতীকী কারাগারের বাইরে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিল। এসময় উৎসুক নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলতে দেখা যায়। পাশাপাশি মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই গানও বাজতে শোনা যায়। পিকআপের ওপরে থাকা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম বলেছেন, তিনি তার মেয়েকে খালেদা জিয়ার সাজে সাজিয়ে প্রতীকী কারাগারে আবদ্ধ করে সমাবেশস্থলে আসেন। মঞ্চের চারপাশে ঘোরে এই শিশু। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানায়।
এইউ