সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মুঘল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রতাপশালী সম্রাট আকবর বাংলা দখলে তার সেনাপতি মানসিংহকে পাঠান। কিন্তু সোনারগাঁও কেন্দ্রিক বার ভুঁইয়াদের নেতা ঈশা খার কাছে নাস্তানাবুদ হন মানসিংহ। এত শক্তিশালী বাহিনী থাকা সত্ত্বেও কেবল দক্ষ নৌবাহিনীর অভাবেই ঈশা খার কাছে পরাজিত হয় মুঘলরা। যেকোনো যুদ্ধেই নৌবাহিনী বড় নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে, আর নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ বরাবরই নৌ শক্তিতে এগিয়ে ছিল। দ্য ওয়ার্ল্ড ডিরেক্টরি অব মডার্ন মিলিটারি ওয়ারশিপ (ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ) তাদের সর্বশেষ যে র্যাংকিং প্রকাশ করেছে, তাতে নৌশক্তিতে স্পেন ও জার্মানির মতো দেশকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের ৩৬ দেশের নৌবাহিনীর ওপর জরিপ চালিয়ে এই র্যাংকিং প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো একটি দেশের নৌবাহিনীতে কতগুলো যুদ্ধজাহাজ এবং ডুবোযান রয়েছে, নৌবহর কত পুরোনো বা লজিস্টিক সাপোর্ট এবং আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এই র্যাংকিং করা হয়েছে। এসব বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর ভিত্তি করে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬তম। তালিকায় বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে ব্রাজিল, কানাডা, জার্মানি ও স্পেনের মতো দেশ।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনী রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রু ভ্যালু রেটিং দিয়েছে ৩২৩.৯। যা তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। তারা বলছে, বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোযান থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌশক্তিতে ভারসাম্য রয়েছে, যা অন্যদের চেয়ে দেশটিকে এগিয়ে রেখেছে। তাই তাদের ট্রু ভ্যালু নম্বরও অন্যদের চেয়ে বেশি। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মার্কিন নৌবাহিনীতে ২৪৩টি ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। মার্কিন নৌবহরে রয়েছে ১১টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ৬৮টি ডুবোযান, ২২টি ক্রুজার, ৭০টি ডেস্ট্রয়ার, ২১ করভেটস, ৮টি মাইন/কাউন্টারমাইন ওয়ারফেয়ার শিপ, ১০টি অফশোর পেট্রোল ভেসেল ও ৩৩টি অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট ভেসেল রয়েছে। তবে মার্কিন নৌবাহিনীতে কোনো ফ্রিগেটস নেই।
চীনকে ৩১৮.৯ ট্রু ভ্যালু রেটিং দিয়েছে ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ। যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীনের অবস্থান। চীনের নৌশক্তি বাড়ছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবহর রয়েছে চীনের। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশটির সক্রিয় ইউনিটের সংখ্যা ৪২৫টি। চীনের নৌবাহিনীর ৩টি এয়ারক্রাফট কেরিয়ার, ৭২টি ডুবোযান, ৪৮টি ডেস্ট্রয়ার, ৭১টি করভেটস, ৪৪টি ফ্রিগেটস, ৪৯টি মাইন কাউন্টার মেজারস/কাউন্টারমাইন ওয়ারফেয়ার শিপ, ১২৭টি অফশোর পেট্রোল ভেসেল ও ১১টি অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট ভেসেল রয়েছে। চীনের নৌবাহিনীতে কোনো ক্রুজার নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের চিরশত্রু রাশিয়ার নৌবাহিনীর বিশ্বের তৃতীয় শক্তিধর। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত রাশিয়ার নৌবাহিনীতে ২৬৫টি সক্রিয় ইউনিট রয়েছে। রাশিয়ার নৌবহরে বেশিরভাগ জলযানই পুরোনো হয়েছে। দেশটির একমাত্র এয়ারক্রাফট কেরিয়ার অ্যাডমিরাল কুজনেতসভও বুড়িয়ে গেছে। রুশ নৌবহরে ৫৮টি ডুবোযান, ১২টি ডেস্ট্রয়ার ও চারটি ক্রুজার রয়েছে। এছাড়া একটি ফ্রিগেট, ৮৩টি করভেটস, ২৮টি মাইন/কাউন্টারমাইন ওয়ারফেয়ার জাহাজ, ২৭টি অফশোর পেট্রাল ভেসেল ও ২১টি অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট ভেসেল রয়েছে। ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ রাশিয়াকে ট্রু ভ্যালু রেটিং দিয়েছে ২৪২.৩।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর নৌবাহিনীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে এমন একটি দেশ রয়েছে, যার নাম হয়তো আপনি কখনও ভাববেনও না। আর সেই দেশটি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। মুসলিম জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দেশটির ট্রু ভ্যালু রেটিং ১৩৭.৭। ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার নৌবহরে ২৪৩টি ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর নৌবাহিনীর তালিকায় পঞ্চম স্থানে দক্ষিণ কোরিয়া, ষষ্ঠ স্থানে জাপান, সপ্তম স্থানে ভারত ও অষ্টম স্থানে ফ্রান্স, নবম স্থানে যুক্তরাজ্য ও দশম স্থানে রয়েছে তুরস্ক। ২৫টি দেশের এই তালিকায় সবার নিচে রয়েছে ব্রাজিল।
ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ’র রেটিংয়ে ১৬তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের নৌবাহিনীর ট্রু ভ্যালু রেটিং ৫৮.৬। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬৬টি সক্রিয় ইউনিট ছিল। বাংলাদেশের দুটি ডুবোযান, সাতটি ফ্রিগেটস, ছয়টি করভেটস, ৫টি মাইন/কাউন্টারমাইন ওয়ারফেয়ার শিপ, ৩০টি অফসোর পেট্রল ভেসেল ও ১৬টি অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট ভেসেল রয়েছে। বাংলাদেশের নৌবাহিনীর কাছে কোনো এয়ারক্রাফট কেয়ার, ক্রুজার বা ডেস্ট্রয়ার নেই। বাংলাদেশের নৌবাহিনীর ভারসাম্য ‘অ্যাভারেজ’ বলে বর্ণনা করেছে ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ।
অর্থনৈতিকভাবে অনেক বড় বড় দেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও নৌশক্তিতে বাঘা বাঘা অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে দেশের পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের জলসীমা রক্ষা করে যাচ্ছে নৌবাহিনী। আর তাই স্পেন, জার্মানি, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, গ্রিস, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও ব্রাজিলের চেয়েও শক্তিশালী নৌবাহিনীর অধিকারী বাংলাদেশ। শক্তিশালী নৌবাহিনী কেবল একটি দেশের সামরিক শক্তিরই পরিচায়ক নয়, বরং অর্থনৈতিক সীমানার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণেরও জন্য প্রয়োজন।
এইউ