সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
১২৮ বছর আগে এক সন্দেহভাজন চোরের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর দুর্ঘটনাক্রমে তার দেহ মমিতে পরিণত হয়। এতদিন তার দেহ সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। এখন ১২৮ বছর পর সমাহিত করা হবে তাকে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট’র।
মমিতে পরিণত হওয়া ওই ব্যক্তি ‘স্টোনম্যান উইলি’ নামে পরিচিত। তার আসল নাম জানা যায়নি। কেননা অসুস্থ থাকা অবস্থায় নিজের আসল নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি। অসুস্থ থাকতে ১৮৯৫ সালের নভেম্বরে তার মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই পেনসিলভানিয়ার রিডিংয়ে একটি শেষকৃত্য প্রতিষ্ঠানে তার মরদেহ সংরক্ষিত রয়েছে।
আগামী শনিবার (৭ অক্টোবর) তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাহিত করা হবে। শবযাত্রার মাধ্যমে তাকে নিকটবর্তী ফরেস্ট হিলস মেমোরিয়াল পার্কে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সমাহিত হবেন উইলি।
উইলির মরদেহকে একটি টাক্সেডো পরানো হবে। তাকে যদি ১৮৯৫ সালে সমাহিত করা হতো, তাহলে ঠিক এ ধরনেরই একটি পোশাক পরানো হতো। ওই শেষকৃত্য প্রতিষ্ঠানটি বহু বছর ধরে উইলিকে সঠিকভাবে সমাহিত করার চেষ্টা করে আসছে।
স্থানীয় ইতিহাসবিদ জর্জ এম. মেইসার ইলেভেন বলেন, মৃত্যুর অল্প সময় পরই উইলির মরদেহ সংক্ষরণ করেন থিওডোর অম্যান। তিনি পেশায় একজন মর্টিশিয়ান ছিলেন। ওই সময় তিনি উদ্ভাবনী ধমনী শুষ্ককরণ নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। ১৯ শতকের শেষের দিকে এই কৌশলটি তখনও তুলনামূলকভাবে নতুন ছিল। সেসময় মৃতদেহগুলো দাফন না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করা হতো।
এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে এই ইতিহাসবিদ বলেন, অম্যানের কাছে ওই প্রক্রিয়ার কোনো উপায় জানা ছিল না। তিনি নিজে থেকেই একটি পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। এটি একটি পরীক্ষা ছিল এবং দৃশ্যত তিনি ফরমালিন বেশি দিয়ে ফেলেছিলেন। এটি মাত্রায় এত বেশি ছিল যে তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।
মেইসার বলেন, কেউ উইলির মরদেহের মালিকানা দাবি করেনি। তাই অম্যান তার নিজের পরীক্ষার ফল দেখতে উইলির মরদেহ সংরক্ষণ করে রেখে দেন। এর পরের উত্তর সবার জানা, নিজের পরীক্ষায় সফল হন তিনি। উইলির দেহ এত ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়েছে যে, অম্যানকেও এদিক দিয়ে পেছনে ফেলেছেন তিনি।
থিও সি. অম্যান ফিউনারেল হোমের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালক কাইল ব্ল্যাঙ্কেনবিলার রয়টার্সকে বলেন, আমরা তাকে মমি হিসেবে উল্লেখ করি না। আমরা তাকে আমাদের বন্ধু উইলি হিসেবে বর্ণনা করি। তিনি এমন একটি আইকন হয়ে উঠেছেন, যিনি শুধু অতীত নয়, রিডিংয়ের বর্তমানেরও অংশ হয়ে গেছে।
দেহ সংরক্ষণের এই প্রক্রিয়ায় উইলির মরদেহ এখনও অনেকটা ভালো রয়েছে। তবে মেইসার বলছেন, তিনি ১৯৫০-র দশকে উইলিকে যেমন দেখেছেন, তার তুলনায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মমির গায়ের চামড়ার রং কালো হয়েছে। ১৮৯৬ সালে একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে স্টোনম্যান উইলির মমিকে ‘মোমের মতো সাদা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু এখন তার গায়ের রং অনেকটা চামড়ার মতো দেখতে হয়ে গেছে।
এক শতকের বেশি সময় ধরে উইলির প্রকৃত পরিচয় নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। স্থানীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি মাতলামির অভিযোগেও অভিযুক্ত ছিলেন। তবে পরিবারের অসম্মানের কথা চিন্তা করে নিজের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান উইলি।
মেইসার বলেন, ১৮৯৫ সালের অক্টোবর মাসে পশ্চিম রিডিং থেকে চুরির অপরাধে উইলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন নিজের নাম জেমস পেন বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
ওই মাসেই রিডিং টাইমসে একটি খবর ছাপা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘ফিলাডেলফিয়ার সন্দেহভাজন অপরাধীকে’ কারাগারে নেওয়া হয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি বোর্ডিং হাউসের একটি খাটের নিচে লুকিয়ে ছিলেন। তার কাছ থেকে একটি সোনার ঘড়ি, ক্ষুর ও অল্প কিছু টাকা পাওয়া গেছে। তবে সে এগুলোর মালিক নন।
পরের মাসে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করেননি উইলি। মেইসারের মতে, তিনি সম্ভবত অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে সৃষ্ট রোগে মারা গেছেন। তবে তার নাম যে জেমস পেন ছিল না, তা মৃত্যুর আগে স্বীকার করে যান তিনি।
তিনি বলেন, আমি একা। আমার জন্ম হয়েছে আয়ারল্যান্ডে। আমার আত্মীয়স্বজন নিউইয়র্ক রাজ্যে থাকে। তবে তারা কোথায় থাকে সে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এতে তারা অসম্মানিত হবেন বলে জানিয়েছিলেন উইলি। তবে ১২৮ বছর পর অবসান হবে অপেক্ষার। শনিবার মাটির দেহ স্পর্শ পাবে মাটির।
এইউ