দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
নড়াইলের নড়াগাতি থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি বীরনিবাসের নির্মাণকাজ গত ৪ দিন ধরে আটকে রেখে মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সঙ্গে অশালীন আচরণসহ হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নড়াগাতি থানার বাঐসোনা গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলীর বিধবা স্ত্রী রেহানা পারভীনের বাড়িতে গত ২৬ সেপ্টেম্বরের এই ঘটনায় তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউএনও ও নড়াইলের পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্প-২ এর আওতায় রেহেনা পারভীনের নামে একটি বীরনিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ দিয়ে মেসার্স রুমা এন্টার প্রাইজকে কার্যাদেশ দেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
ঠিকাদার রেহানার নিজস্ব জমিতে নির্মাণসামগ্রী জমা করার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে উপজেলার ফুলবদিনা গ্রামের মৃত বাবু মোল্যার ছেলে হাসিবুর মোল্যা ও গোপলগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের মৃত হোসেন মোল্যার ছেলে হাবিবুর রেহানার বাড়িতে গিয়ে বীরনিবাস নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা হিসাবে দাবি করলে রেহানা টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তখন তাকে বীরনিবাস নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ঠিকাদারের শ্রমিকরা এই বীরনিবাসটির নির্মাণকাজ শুরু করলে দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ নড়াগাতি থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান ওই দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এবং ঠিকাদারের শ্রমিকদের আটকের হুমকি দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয় এসআই আসাদুজ্জামান মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করাসহ আশালীন আচরণ করে। শুধু তাই নয় এই পুলিশকর্তা শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলল ৫ টায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে নড়াগাতি থানায় হাজির হয়ে তার সঙ্গে সমাধান না করা পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ দিয়ে চলে যান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেহানা পারভীন অভিযোগ করে বলেছেন, বীরনিবাস নির্মাণের মালামাল আসতে শুরু করার পর থেকে হাবিবুর মোল্যা ও হাসিবুর মোল্যা গত কয়েক দিন ধরে তার কাছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা না দিলে সে পুলিশ দিয়ে আমার বীর নিবাসের কাজ বন্দ করার হুমকি দিয়ে আসছে। তারই জের ধরে এসআই আসাদুজ্জামান ওই দুজনের সঙ্গে যোগসাজসে তার বাড়ির নির্মাণকাজ আটকে দিয়ে থানায় গিয়ে মীমাংসার নামে তাদেরকে হয়রানি করছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুমা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. লিটু শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, পুলিশ তার নির্মাণ কাজের স্থলে এসে জোর করে তার শ্রমিকদের উঠিয়ে দিয়ে নির্মাণ কাজ আটকে দিয়েছে। শুধু তাই নয় শুক্রবার বিকেলে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে থানায় গিয়ে এস আই আসাদুজ্জামান ও তার সহযোগেীদের সঙ্গে আপস না করা পর্যন্ত বীনিবাসের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ জারি করেছেন।
অভিযুক্ত হাবিবুর মোল্যার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও অপর জন হাসিবুর মোল্যা চাঁদা দাবির সত্যতা অস্বীকার করে বলেছেন, তারা ওয়ারিশ হিসাবে জমির একটি অংশ দাবি করেন। তাই এই নির্মাণকাজ ঠেকাতে তার ভায়রা হাবিবুর এসআই আসাদুজ্জামানকে ফোনে ডেকে নেন এবং এক হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ কাজটি বন্ধ করে শালিশের কথা বলেছে। নড়াগাতি থানার এসআই আসাদুজ্জামন বীরনিবাসের কাজ বন্ধ করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে তাই তিনি কাজ বন্ধ করে থানায় মীমাংসার জন্য যেতে বলেছিলেন। তবে কাজটি বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা ছিল না বলে জানান।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মাকলুকার চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে একটি বীরনিবাসের কাজ বন্ধ করা ও একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আশোভন আচরণ খুবই দু:খজনক। তিনি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা বলেছেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি আগে কিছু জানতেন না। পরবর্তীতে ইউএনওর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।
কালিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুনু সাহা অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেবি