সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। ১৮৯৯ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে তিনি অন্তত সাতবার এ রাজ্য ভ্রমণ করেন। কবির বেশ কিছু কবিতা, গান ও উপন্যাস এই ত্রিপুরায় বসে লেখা। এর মধ্যে বিসর্জন, রাজর্ষি ও মুক্তি উল্লেখযোগ্য।
প্রথমবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ত্রিপুরায় আসেন রাজ অতিথি হয়ে। বীরচন্দ্র মাণিক্যের ছেলে রাধাকিশোর মাণিক্য তখন রাজার আসনে। সেই সময়ের উপযোগী রাজকীয় অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তায় রাজ পরিবারের সঙ্গে কবির আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আগরতলার কুঞ্জবন এলাকায় তৎকালীন রাজপরিবারের প্রাসাদের কাছেই বানানো হয়েছিল অতিথিশালা 'মালঞ্চ নিবাস' যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ত্রিপুরায় এলে থাকতেন।
নোবেল পুরস্কার লাভের পর ভুবনজোড়া খ্যাতি নিয়ে যখন কবিগুরু ত্রিপুরায় যান তখন আগরতলার উমাকান্ত একাডেমিতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কবিকে সংবর্ধনা জানানো হয় ১৯১৯ সালের ১০ই নভেম্বর। সেটি ছিল মহারাজা বীরেন্দ্রকিশোর মাণিক্যের রাজত্বকাল।
ত্রিপুরায় কবিগুরুর শেষ সফর ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ১০ই ফাল্গুন। সে বছর কবির সঙ্গে এসেছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধু প্রতিমাদেবী, পৌত্রী নন্দিনী এবং আরও অনেকে।
যদিও তারপর আর কবি ত্রিপুরায় যাননি। কিন্তু ত্রিপুরার রাজার সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ছিল। জানা যায় কবিগুরুর ৮০তম জন্মদিন ত্রিপুরার উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদে পালন করা হয়েছিল এবং তাকে 'ভারত ভাস্কর' উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছিল।
মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বিশেষ দূত শান্তিনিকেতনে পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কবিগুরুর হাতে বিশেষ সম্মাননাসহ মানপত্রটি তুলে দিয়েছিলেন।
কবিগুরু ভারতের মেঘালয়েও ভ্রমণ করেছেন। সেসময় তিনি মোঘালয়ের শিলংএ বসে রচনা করেছিলেন শেষের কবিতা উপন্যাসটি। সেখানেও তার রয়েছে অনেক স্মৃতি। রয়েছে তার অবস্থানকালের স্মৃতিময় বাড়ি-বাংলো। তার ব্যবহৃত অনেক কিছুই আজও অম্লান হয়ে আছে শিলং রবী ঠাকুর প্যালেস যাদুঘরে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো শিলংএ স্থানীয়দের বেশির ভাগ মানুষ রবী ঠাকুরকে চিনেন না। বিশেষ করে সেখানকার যুব সমাজ বা শিক্ষার্থীদের বেশীর ভাগই রবী ঠাকুরের নাম শুনে প্রথমে থমকে যায়। এর কারণ, সেখানের মানুষ বাঙালি নয়, তারা খাসিয়া ও গারো জাতি গোষ্ঠীর। সে কারণে বাঙালি কৃষ্টি-কালচার ও কবি-সাহিত্যিকদের না চেনারই কথা।
এর বিপরীতে দেখেছি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। এখানের ৮৭ ভাগ মানুষ বাঙালি হওয়ায় এখানকার মানুষ, সামাজিক অবস্থা, কৃষ্টি-কালচার, ভাষা হুবহু বাংলাদেশের মতোই। ভারতের আরেক রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও বাঙালি কৃষ্টি-কালচারের অভাব নেই। তারপরও ত্রিপুরার মতো আন্তরিক মনে হয়নি আমার কাছে।
ত্রিপুরায় রবী ঠাকুরকে বেশ মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। তার প্রমাণ ত্রিপুরার আগরতলা রাজধানীর শহরের বিভিন্ন পার্ক, সরকারি-আধাসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিকভাবে রবী ঠাকুরের অবস্থান স্থানীয় মানুষের হৃদয়ে।
তাইতো সেখানকার তৎকালীন টিপরা রাজাও রবী ঠাকুরের সম্মানে প্রতিষ্ঠা করেছেন বাড়ি, গার্টেন বা পার্ক, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে তার স্ট্যাচু।
শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ালেই চোখে পড়বে রবী ঠাকুরের এসব স্ট্যাচু। উমাকান্ত একাডেমি নামে এমনি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আগরতলা শহরের মূল কেন্দ্রে। বেশ সুনাম ও শত বছরের পুরোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা রবী ঠাকুরের স্ট্যাচুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হবে আমি বাংলার মধ্যেই আছি।
জেবি