সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৯টা বেজে ২৫ মিনিট। বিদ্যালয়ে ক্লাসের তালা খুলছে শিশু শিক্ষার্থীরা। ৯টা ৩৪ মিনিটে পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের দপ্তরি। তখনও আসেননি কোনো শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে সাংবাদিক আসার খবরে শিক্ষক এসে পৌঁছান সকাল ১০টারও পরে। অথচ সরকারি নিয়মানুযায়ী সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের মধ্যে বিদ্যালয়ে সব শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত থাকার কথা।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ৫৩ নম্বর এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। তদারকির অভাবে বিদ্যালয়টিতে এমন অনিয়মের চিত্র নিত্যদিনের বলে জানান স্থানীয়রা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৩ সালে প্রায় তিন বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই বিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১২ জন। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুইজন। তার মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। যিনি অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর একজন সহকারী শিক্ষক চালিয়ে নিচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম। এতে স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টি।
অফিস কক্ষের তালা খোলার সময় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সম্রাট জানায়, স্কুলের (দপ্তরি) বাচ্চু চাচা একটু পরে আসে। সেজন্য তার বাড়ি থেকে চাবি এনে তারা নিজেরাই বিদ্যালয়ের তালা খুলে ক্লাসে বসে। পরে দপ্তরি ও শিক্ষকরা আসেন। শিক্ষকদের অপেক্ষায় বসে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. আজিব বলে, তাদের স্কুলে মাত্র দুইজন শিক্ষক আছে। ১০টার দিকে ক্লাস শুরু হয়।
তবে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. তারিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, সে নিজেই প্রতিদিন বিদ্যালয়ের তালা খোলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তার আসতে দেরি হয়েছে। সেজন্য শিক্ষার্থীরা তালা খুলেছে। শিক্ষকদের ফোন দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, স্কুল খোলার ঠিক-ঠিকানা নেই। শিক্ষকরা ৯টায়ও আসে, ১০টায়ও আসে। দিনে দিনে স্কুলটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. তারেক রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট প্রকট। প্রধান শিক্ষক ব্যস্ত থাকেন অফিসের নানা কাজে। সারাদিন তিনি একাই ক্লাস নেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া খুবই জরুরি।
প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃষ্টির কারণে স্কুলে আসতে দেরি হয়েছে গতকাল। বিদ্যালয়ে সাংবাদিক এসেছে এমন খবরে দ্রুত চলে আসেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীদের তালা খোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সাল থেকে মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়েই চলছে বিদ্যালয়টি। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিদ্যালয় খুলতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে হবে। আর তালা খুলবেন দপ্তরি। যদি এর কোনো ব্যত্যয় ঘটে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এইউ