সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
যশোরের অন্যতম প্রধান নদ ভৈরব প্রবাহমান করতে ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্প শেষ হলেও সুফল মেলেনি। ভৈরব নদের ওপর অন্তত ৫১টি অপরিকল্পিত সেতু রয়েছে। অপরিকল্পিত সেতুতে ভৈরব নদের টুঁটি চেপে ধরেছে। একই অবস্থা আরও অন্তত ৬টি নদ-নদীর। কম দৈর্ঘ্য ও কম উচ্চতার সেতু একদিকে যেমন নদী শাসন করেছে, অন্যদিকে নৌযান চলাচলের পথ রুদ্ধ করেছে। এতে স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে নদ-নদী। ছাড়পত্র ছাড়া নদ-নদীতে সেতু নির্মাণে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে এ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না সেতু বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ভৈরব নদের ওপর অপরিকল্পিত ৫১টি সেতু-কালভার্ট রয়েছে। এরমধ্যে ভৈরব নদের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইড) ২৩টি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের ১৯টি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ৩টি, সড়ক ও জনপথের (সওজ) ৪টি, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ১টি করে সেতু-কালভার্ট রয়েছে। ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব নদ খননকাজ শেষ হলেও সুফল মেলেনি। প্রবাহমান হয়নি ভৈরব নদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভৈরব নদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অপরিকল্পিত সেতু-কালভার্ট। এই সেতু কালভার্ট অপসারণ না করলে ভৈরবের প্রবাহ স্বাভাবিক হবে না।
এদিকে ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (ডব্লিউবিবিআইপি) আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যশোরে ৭টি নদ-নদীর উপর ৯টি কম উচ্চতার সেতু নির্মাণ করছে। এরমধ্যে সদরে ভৈরব নদের ওপর ৩টি সেতু রয়েছে। যশোর সদর উপজেলার দাইতলা, রাজারহাট ও বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলায় ভৈরব নদের ওপর নির্মিত পুরোনো ২টি সেতু ভেঙে সেখানে কম উচ্চতার ২টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এই সেতুগুলোর উচ্চতা ও দৈর্ঘ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ খুলনার নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশ্রাফ উদ্দীনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল অপরিকল্পিত নদের সেতু পরিদর্শন করেন। তারা বলছেন, বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ম অনুযায়ী সেতুর উচ্চতা হওয়ার কথা পানির স্তর থেকে গার্ডারের নিচ পর্যন্ত ১৬ ফুট, কোনোটির ২৫ ফুট। যশোরে ভৈরব নির্মাণাধীন সেতুর উচ্চতা ৪ দশমিক ৫৯ ফুট থেকে ১১ দশমিক ৫০ ফুট পর্যন্ত। সেতু নির্মাণ করতে হলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে ছাড়পত্র (নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স) নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব সেতু নির্মাণে বিআইডব্লিউটিএ ছাড়পত্র নেয়নি এলজিইডি।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিএ খুলনার নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশ্রাফ উদ্দীন, উপরিচালক মোহা. মাসুদ পারভেজ ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ভৈরব নদের ওপর এলজিইডির নির্মানাধীন তিনটি সেতুর কাজ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, নদের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ করে বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্র ছাড়াই এলজিইডি সেতু নির্মাণ করছে। এই সেতু নির্মাণ হলে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু জানান, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় নেই। যে যার মতো উন্নয়নের নামে পরিবেশ ও নদী ধংস করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাও তারা মানছে না। শুধু ভৈরব নদ নয় যশোরের ৭টি নদ-নদীর ওপর অপরিকল্পিতভাবে ৯টি সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। একটিও নৌ চলাচলের উপযোগী নয়। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেতু নির্মাণ করছে তারা কাজ বন্ধ না করলে আইনি ও জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। যশোরবাসী রাজপথে আন্দোলনে নামবে।
এ বিষয়ে এলজিইডি যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনেই এলজিইডি সেতু নির্মাণ করছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। তিনি বলেন, ভৈরব নদের ওপর অবস্থিত অপরিকল্পিত ছোট ছোট সেতু পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা হচ্ছে। সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনেই করা হচ্ছে।
এইউ