সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কানাডা ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এখন পশ্চিমা মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা এই ভেবে ভয়ে আছে, বিশ্বের অন্যতম বড় দুই অর্থনীতির দেশের এই দ্বন্দ্বের আঁচ, যদি তাদেরও পোড়ায়!
পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মনে আতঙ্ক ঢুকে গেছে, ভারতের সঙ্গে যদি তাদের বিভাজন তৈরি হয়, তাতে সবারই ক্ষতি হবে। কেননা ভূরাজনীতির দাবার ছকে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
ভারত কেবল ক্রমবর্ধমানশীল শক্তিই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশও। আবার অর্থনীতির বিচারে ভারতের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। এছাড়া চীনকে ঠেকাতে পশ্চিমাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহ হিসেবেও ভারতকে মনে করা হয়।
সম্প্রতি ভারতে সমাপ্ত হওয়া জি-২০ সম্মেলনে এই বিষয়টি দৃশ্যমান হয়। ওই সম্মেলনে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রদান করে, সেখানে রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকেন জি-২০’র নেতারা।
বরং ভারতকে না চটিয়ে দিল্লির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহ দেখা গেছে পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে। যদিও এতে কিয়েভের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম হয়।
পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে আরেকটা ভয় কাজ করছে। তাদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ ভারত ও কানাডার পক্ষে অবস্থান নেওয়া শুরু করবে।
হারদ্বীপ সিং নিজ্জার
গত জুনে পশ্চিমাঞ্চলীয় কানাডায় একজন শিখ অধিকার কর্মী হারদ্বীপ সিং নিজ্জার আততায়ী হামলায় নিহত হন। ওই হামলার পেছনে ভারত দায়ী বলে গত সপ্তাহে অভিযোগ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এরপরই দুই দেশের মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠে।
সাম্প্রতিক মাসগুলো ভারত উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাইছে। এই দেশগুলোর নেতৃত্বকে অনেক সময় গ্লোবাল সাউথ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এসব দেশের অধিকাংশই ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানানোর বিরোধী।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গ্লোবাল সাউথের এসব দেশকে নিজেদের পক্ষে টানার জন্য জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ এসব দেশ এবং তাদের অর্থনীতির হিসাব-নিকাশের বাইরে নয়।
কূটনীতিকরা চাচ্ছে না, কমনওয়েলথভুক্ত দুই দেশের এই লড়াই শেষ পর্যন্ত উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের এবং ট্রান্স আটলান্টিক শক্তির সঙ্গে উন্নয়নশীল একটি দেশের বিবাদ হিসেবে আরও বড় আকার ধারণ করুক।
কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গেও আলাপকালে শিখ নেতার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন ট্রুডো। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন, কানাডার মিত্ররা অটোয়ার পাশে থাকলেও সতর্কতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
অনেকটা গা বাঁচিয়ে হোয়াইট হাউস যে অবস্থান ব্যক্ত করেছে, তাতে তাদের ভাষ্য হচ্ছে, হত্যার ওই অভিযোগের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। কানাডার তদন্ত চলমান রেখে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি বলেও জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
কানাডা ছাড়াও যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শিখ জনগোষ্ঠী রয়েছে। এসব দেশেও এই ইস্যুতে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের ভয় রয়েছে। বিশেষ করে, এসব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এর একটা প্রভাব রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারি বলেন, কানাডা যে গুরুতর উদ্বেগের কথা উত্থাপন করেছে, তা খুব সতর্কভাবে শুনবে ব্রিটেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি সোমবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলির সঙ্গে কথা বলেছেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, কানাডা যা বলছে, তা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে যুক্তরাজ্য। তবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করা হবে কিনা এ ব্যাপারে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
তবে তিনি বলছেন, কানাডার তদন্ত শেষ হওয়ার পরই যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্ত কী হবে, তা জানাবে দেশটি। ব্রিটিশ এই কূটনীতিক বলেন, কানাডা ও ভারত, দুই দেশই যুক্তরাজ্যের খুব কাছের বন্ধু। তারা কমনওয়েলথের অংশীদার দেশ।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ওই অভিযোগের ব্যাপারে ক্যানবেরা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। আমাদের এই উদ্বেগের কথা ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।
অবস্থা এখন এমন যে, পশ্চিমারা কানাডার পক্ষেও যেতে পারছে না। আবার ভারতের বিপক্ষেও যেতে পারছে না। বরং পুরো তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্তই মুখ বন্ধ রাখার কৌশল নিয়েছে তারা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
তবে কানাডার গোয়েন্দাদের হাতে থাকা কিছু তথ্য মিত্রদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারে অটোয়া। এতে যদি অভিযোগ অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে পাশার দান উল্টে যেতে পারে।
যদি এমনটা ঘটে, তাহলে আইনের শাসন এবং রাজনীতির দাবার চালের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে পশ্চিমাদের। তবে অতীতে দেখা গেছে, পশ্চিমা দেশগুলো অন্য দেশে ঢুকে আতহায়ী হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য রাশিয়া বা ইরান বা সৌদি আরবকে ঠিকই শাসিয়েছে। কিন্তু ওই তালিকায় আপাতত ভারতকে বাদ দিয়েছে পশ্চিমারা।
এইউ