দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারীতে ৪ দশক পর গিরাই নদী ও মরা শংকোষ খাল ২১টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৬ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। গিরাই নদী ও মরা শংকোষ খালগুলো খনন শেষ হওয়ায় দখলমুক্ত ও অস্তিত্ব ফিরে পাওয়ায় দুই পাড়ের ফসলি জমিতে সেচ সুবিধা ও দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া পানি প্রবাহ ফিরে আসায় চলতি বন্যার প্রকোপ কমেছে আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ কৃষিজমিতে ফসল চাষে সাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গিরাই নদী ৮.৩৩ কিলোমিটার এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নে মরা শংকোষ ৬.৯০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন কাজ শেষ হয়েছে। ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গিরাই নদী পুনঃখননে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মরা শংকোষ পুনঃখননে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
খাল পুনঃখনন শেষ হওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দুই পাড়ের ফসলি জমিতে কৃষকরা নিচ্ছেন সেচ সুবিধা। পাশাপাশি চলতি বৃষ্টি-বন্যায় পানি নিষ্কাশন হয়েছে এবং সঞ্চিত পানিতে হাঁস ও মাছ চাষসহ গৃহস্থলীসহ কৃষিকাজে ব্যবহার করে অনেকে সাবলম্বী হয়ে উঠছেন। দীর্ঘদিন ধরে খালগুলো অবৈধ দখল ও পলি পড়ে ভরে যায়। তাই এই খালে পুনঃখনন কাজ শেষ করায় খুশি স্থানীয়রা। এছাড়া গত অর্থবছর বোয়ালের দাঁড়া হতে মোয়ামারী হয়ে বেরুবাড়ী সুইচ গেট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন হওয়ায় কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এলাকার মানুষ পেয়েছে খাল খননের সুবিধা।
নাগেশ্বরীর সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী ব্যাপারী লাকু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মহান উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। গিরাই নদী ৮.৩৩ কিলোমিটার পুনঃখনন শেষ হওয়ায় চলতি বন্যার পানি এলাকা থেকে নিমিষেই নেমে গেছে। দুই পাড়ের ফসলের জমিতে সেচ দিয়ে কৃষকরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।
চর ভুরুঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মানিক উদ্দিন বলেন, মরা শংকোষ খাল পুনঃখনন কাজ শেষ হওয়ায় এবার বন্যার পানির জলাবদ্ধতা থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। জমিতে সেচ দিয়ে ফসল চাষাবাদ করার পাশাপাশি হাঁস ও মাছ চাষ করাসহ বিভিন্ন উন্নতি হচ্ছে।
ঠিকাদার মনোয়ার হোসেন লিটন ও মোসলেম উদ্দিন বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নাগেশ্বরী গিরাই নদী ও ভুরুঙ্গামারীর মরা শংকোষ খাল পুনঃখনন কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিধি মোতাবেক শেষ করা হয়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নাগেশ্বরী উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে খালগুলো পলি পড়ে মজাভরে যাওয়া এ খাল পুনঃখনন কাজ শেষ হয়েছে। খনন শেষ হওয়ায় স্থানীয়রা সুফল ভোগ করছেন।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রংপুর সার্কেলের-ইআইআর প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্প বাস্তবায়নের প্রত্যয়ে ‘বিএমডিএর স্মার্ট খাল পুনঃখনন’ দুর্বার গতিতে বিধি মোতাবেক শেষ হয়েছে। গিরাই নদী-মরা শংকোষ খাল পুনঃখনন কাজ শেষ হওয়ায় খালে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ও বৃষ্টি-বন্যায় পানি সহজেই নেমে যাচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা দূর হয়ে কৃষিজমি চাষাবাদের উপযোগী হয়েছে। এতে করে কৃষকরা অনেক সুফল পাচ্ছেন।
রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এসব খাল পুনঃখনন শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও অন্যান্য মজাভরা খাল পুনঃখনন করা হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গিরাই নদী ও মরা শংকোষ খাল পুনঃখনন শেষ হওয়ায় দখলমুক্ত ও অস্তিত্ব ফিরে পেয়েছে। চলতি বন্যার প্রকোপ কমেছে আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ কৃষি জমিতে কৃষকরা সেচ ব্যবহারসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে আর কৃষকের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে খালগুলো অবৈধ দখল ও পলি পড়ে ভরে যাওয়ায় বিএমডিএ’র মাধ্যমে খালগুলো পুনঃখনন কাজ শেষ হয়েছে। বৃষ্টি-বন্যায় পানি নিষ্কাশন এবং সঞ্চিত পানিতে হাঁস ও মাছ চাষসহ গৃহস্থলীসহ কৃষিকাজ করে অনেক কৃষক সাবলম্বী হবেন।
এইউ