সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থাকে ক্ষুধার্ত নারীর মুখে লিপস্টিক দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার (১৯ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেওয়া হয়েছে, এখন তলানির দিকে আসছে। বৈদেশিক রিজার্ভের ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে সরকারের হাতে। যারা সচেতন জনগণ, বিজ্ঞমানুষ তারা বলছেন তা নয়… আসলে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। এর মধ্যে, বিদ্যুৎ খাতের পাওনা পরিশোধ করতে ৪ বিলিয়ন ডলার চলে যাবে। ডলার তো তলানিতেই।
তিনি আরও বলেন, মানে ক্ষুধায় জরাজীর্ণ ক্লিষ্ট নারীর মুখে লিপস্টিক দিলে যে অবস্থা হয়… শেখ হাসিনার উন্নয়ন হচ্ছে সেইরকম। এধরনের নারীকে সাজগোজ করলে যে রকম দৃশ্য লাগে, বাংলাদেশের অর্থনীতির দৃশ্য সেই রুগ্ন-ক্লিষ্ট নারীকে প্রশাধন-চর্চিত করলে যেমন লাগবে বাংলাদেশের অর্থনীতি তেমনি রুগ্ন-ক্লিষ্ট প্রশাধন-চর্চিত একটি অর্থনীতি।
রিজভী বলেন, আমরা একটা শূন্য গহ্বরের ভেতরে যেন বসবাস করছি। আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কিসের উপর দাঁড়িয়ে আছি তা নিজেরাই বলতে পারব না। শুধু ব্যাংক থেকেই ১২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এটা আমার বক্তব্য না এটা সিডিপির বক্তব্য। আমাদের জিডিপি ১২ শতাংশ নাই হয়ে গেছে-এটা ভাবা যায়, এটা কল্পনা করা যায়?
বিএনপির এই নেতা বলেন, ৯২ হাজার কোটি টাকা শুধু ব্যাংকখাত থেকে লোপাট হয়ে গেছে। লোপাটকারী কারা? এই অলিগার্কিরা কারা? এরা সবাই ক্ষমতাঘনিষ্ঠ মানুষ, আওয়ামী লীগের লোকজন বা আওয়ামী লীগের অর্থ প্রদানকারী, আর্থিক সহায়তাকারী অথবা তাদের যারা, দলের যারা আজকে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে তারা।
তিনি বলেন, আজকে ঋণখেলাপী এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলছে যে, এদের ৯০ শতাংশ হচ্ছে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোকেরা। ২০২২ সালে ছিলো ২২ হাজার কোটি টাকা। একটি দেশের উন্নয়ন মানে তো সব দিক থেকে উন্নতি, আমাদের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছ্বল, ব্যাংকগুলো ভায়াবেল, আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম উৎকর্ষতা লাভ করছি… এমন তো না।
রিজভী আরও বলেন, আমরা যে বিনিয়োগ করবো বা যারা বিনিয়োগ করবে বিদেশিরা, দেশিরা সেই বিনিয়োগ করার জন্য যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে হয় সেটা কেনার জন্য তো ডলার নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পল্লী- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গতকাল ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে, সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকবে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংক কী একেবারে রেস্ট্রিক্টেড ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্টেও তো যদি বৈধ মানুষ যেতে চায় তাদের তো কোনো অসুবিধা হয় না।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান। এটা তো সব সময় একাউন্টিভেলিটির মধ্যে থাকবে, এখানে সাংবাদিকরা তো যেতে পারে। সাংবাদিকতা করে তো দুবাইয়ে বাড়ি করেনি, সাংবাদিকরা কেউ মালয়েশিয়া-কানাডায় বাড়ি করেনি। ওবায়দুল সাহেব আপনি এসব কি কথা বলছেন।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের যে মাফিয়ারা দেশের জনগণের পকেট কেটে যে টাকাগুলো নিয়ে আজকে অর্থবিত্তের মালিক হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিত্তবিলাসে মগ্ন রয়েছে তাদের কথা যেন দেশবাসী অথবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানতে না পারে সেজন্য সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপও ভোটাররা বর্জন করবে-মন্তব্য করে রিজভী বলেন, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন বর্জনের জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, আহ্বান জানাচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন। বর্জনের যে প্রস্তুতি সেটা সমান তালে চলছে।
তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, প্রথম ধাপের নির্বাচনে আমাদের আহ্বানে জনগণ যেমন সাড়া দিয়েছে এবং ভোট বর্জন যেমন সফল হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনও তেমন হবে। এই দুর্নীতি পীড়িত আওয়ামী লীগ সরকারকে মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে… এর প্রতিফলন ইতোমধ্যেই হয়েছে… আবারও হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের এক কালী মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়।
সেখানে পিটুনিতে দুই শ্রমিকের প্রাণ যায়। অনুষ্ঠানে তাদের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন রুহুল কবির রিজভী।
এসময় দলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান মাশুক, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিপি/