সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আওয়ামী লীগ না, বিএনপি নেতারা দেশ ছেড়ে পালায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বলছে- আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেছে।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জেলা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জিয়া, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্যের কথা চিন্তা করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকে বিরোধী দল অনেক কথা বলে। আবার বলে আমরা নাকি পালানোর পথ পাবো না। আমি বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করি, পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না, পিছু হটে না। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দিয়েছিল দেশে আসতে। আমি বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছিলাম। ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে, তখনও আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল, তার বাচ্চা হয়েছিল, তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছিলাম যাব, এই কেস মোকাবিলা করব। দেশে ফিরে এসেছি শুধুমাত্র বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ যারা বলে আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না, আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না, পালায় আপনাদের নেতারাই। বিএনপির নেতারা কে? তারা নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান?।
তিনি বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হয়। আমি আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি এমন একটি দেশে ফিরে আসি, যেখানে আমার কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। জাতির পিতার খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সে অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তারপর চেষ্টা করেছি, বাংলাদেশকে উন্নত করতে। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়নি। চিন্তাও করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির চরিত্র 'অমানবিক'। তারা মানুষ চেনে না। তারা মানুষের জন্য কিছু করতে পারে নাই। তাদের কাজ কী? নিজেরা লুটেপুটে খাবে।
তিনি বলেন, আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আর বিএনপি কী করে? মানুষ খুন করা, অগ্নিসন্ত্রাস তাদের কাজ।
তিনি বলেন, বিএনপি তিন হাজার ৮০০ বাস, ২৯টি ট্রেন, লঞ্চ, প্রায় ৭০টি সরকারি অফিস, ৬টি ভূমি অফিস আন্দোলনের নামে পুড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না, আপনারা বিবেচনা করেন, কোনো মানুষ জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে? এই বিএনপি-জামায়াত কীভাবে জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মেরেছে? শুধু সাধারণ মানুষ না, পুলিশকে পর্যন্ত কীভাবে মাটিতে ফেলে এমনভাবে পিটিয়েছে!
তিনি আরও বলেন, এ রাজশাহীতে জাতির পিতা স্বাধীনতার পর কলকারখানা করে দেন। এরপর সব বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ বন্ধ কারখানা চালু করতে কাজ করে। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ বাঁধ করে দিয়ে সেই ভাঙন আমরা রোধ করে দেই। এই রাজশাহীর মানুষের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এরইমধ্যে রাজশাহীর মানুষের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।
রাজশাহীর উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত ১৪ বছরে ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি করেছি। একটু আগেই আমরা প্রায় ১ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। এর মধ্যে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৬টির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন।’
দেশের জয়যাত্রা ধরে রাখতে রাজশাহীর জনসভায় নৌকায় ভোট চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভাস্থলে পৌঁছান তিনি। এ সময় মঞ্চ থেকে স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
এর আগেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আওয়ামী লীগের এ জনসভা। এর আগে রোববার সকাল থেকেই রাজশাহী ও বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসতে থাকেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকেই মাদ্রাসা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
বেলা সাড়ে ১১টার পর আসা নেতাকর্মীরা আর মাঠের ভেতরে ঠুকতে পারেননি। ফলে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়েছে জনসভাস্থলের আশপাশের সড়কগুলোতে। একদিকে জনস্রোত গিয়ে ঠেকেছে সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে ঘোষপাড়ার মোড়, পাঠানপাড়া—এমনকি সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে জনসভার পরিসর।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে অবতরণ করেন। সেখানে শিক্ষানবিশ পুলিশ সুপারদের অনুষ্ঠান শেষে তিনি রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসমাবেশে উপস্থিত হন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে হেলিকপ্টারে করে নগরীর জেলখানা প্রশিক্ষণ মাঠে নেমে গাড়িতে করে সভামঞ্চে আসেন। তখন ময়দানভর্তি জনতা হাততালি ও স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে জনতার প্রতি শুভেচ্ছা জানান।
মাদ্রাসা মাঠে (বর্তমান হাজী মুহম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ) রোববার দুপুর ১২টায় জনসভার শুরুতে পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল, ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়। এরপর দলের প্রয়াত নেতাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে স্থানীয় নেতারা বক্তব্য শুরু করেন।