সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
সন্তানের জন্মদান ও তাকে সযত্নে লালন করে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে বাবা-মা একে অপরের পরিপূরক। একজন মা তার সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার পর প্রতিটি পদে যেমন সন্তানকে সযত্নে বুকে আগলে রাখেন, ঠিক তেমনি সন্তানের চাহিদা পূরণ করতে শত কষ্ট সহ্য করে বাবা হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে নেমে পড়েন আয় উপার্জনের কাজে। প্রত্যেক বাবা মায়ের কাছে তাদের সন্তান হলো চোখের মণি, হৃদয়ের স্পন্দন।
সন্তানের প্রতিটা ব্যাপারেই বাবা-মা সচেতন থাকেন। তারপরেও অনেক সময় দেখা যায় সচেতন থাকার পরেও তারা সন্তানকে চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, খেলাসহ ছোটখাটো অনেক বিষয়েই সঠিক নিয়ম-কানুন শেখাতে পারেন না। তাই কিছু ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরি।
আবার অনেকসময় তারা অনেক নেতিবাচক শিক্ষাও পায় যা তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সঠিক নয়। এমন অসচেতনতার ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১-৩ বছর বয়সী শিশুরা বেশি শেখে। কারণ, এই বয়সের শিশুদের জানার আগ্রহ প্রবল থাকে। তাই এই সময়ে শিশুর বাবা-মাকে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই সময়ে সন্তানকে যা শেখাবেন-
শিশুরা প্রথম হাঁটতে শিখলে একটু বেশিই ছোটাছুটি করে এবং অনেক জিনিস হাতে নিতে চায়। কাঙ্ক্ষিত জিনিস হাতের নাগালে না পেলে, অনেক বাচ্চা চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে সেটা নেওয়ার চেষ্টা করে। এটা যে শিশুরা একা একাই শেখে তা নয়। বরং তারা বাবা-মা কিংবা পরিবারের অন্য কাউকে দেখে শেখে। আবার অনেক সময় বাবা-মাও বাচ্চাকে চেয়ারের উপর দাঁড় করিয়ে দেন। বাচ্চাদের এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা।
বাবা-মা বা বড় কারও অনুপস্থিতিতে শিশু একা একা চেয়ারে দাঁড়িয়ে কিছু নিতে গেলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই ব্যাপারে বাবা মায়ের কখনোই উৎসাহ দেওয়া উচিত নয়। সন্তানকে শেখাতে হবে, চেয়ার শুধুমাত্র বসার জায়গা।
শিশুরা মেঝেতে খেলার মাঝে অনেক সময় দুই পা উল্টো দিকে ভাঁজ করে বসে। অনেকটা ‘W’ এর মতো। এভাবে বসলে শিশুর পা ও কোমরের হাড়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া শিশুর ঘাড় ও কাঁধের টিস্যুগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাচ্চারা যেন এই ভঙ্গীতে না বসে সেজন্য চিকিৎসকরা বাবা-মাকে সচেতন থাকতে বলেন।
শিশুরা বাইরে খেলাধুলা করতেই বেশি পছন্দ করে। মাঠে বা খোলামেলা জায়গায় খেলাধুলা করা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। তবে বাচ্চাদের কখনোই নোংরা জায়গায় খেলতে দেওয়া যাবে না। এতে জীবাণুর সংক্রমণে শিশুর দেহে নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।
এঁটেল মাটি খেলার জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। পিচ্ছিল বলে এই মাটিতে খেলার সময় পড়ে গেলে শিশু মারাত্মক আঘাত পেতে পারে। আবার ইট বা সিমেন্টের তৈরি শক্ত জায়গাও শিশুদের খেলার অনুপযোগী। বাচ্চাকে নরম ও শুকনো মাটিতে খেলতে দিতে হবে।
অনেক বাবা-মা বাসার বারান্দা কিংবা জানালার রেলিং ধরে শিশুদের দাঁড় করান। এটি মোটেও ঠিক না। শিশু একই পদ্ধতি যখন রাস্তা বা ছাদের রেলিং ধরে অনুসরণ করে তখন ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তাই শিশুদের কখনোই রেলিং বেয়ে উঠতে শেখানো ঠিক নয়।
চঞ্চলতা শিশুদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সন্তান বেশি দুষ্ট হলে বাবা-মা সামলাতে না পেরে হাতে তুলে দেন ইলেকট্রনিক ডিভাইস। যাতে এসবের মধ্যে তার মনোযোগ আটকে যায়। আর এতেই ঘটে বিপত্তি।
স্ক্রিনের নীল আলো শিশুর চোখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘক্ষণ টিভি, ল্যাপটপ ও ফোনে চোখ রাখলে শিশুর অন্য কাজে মনোযোগ কমে যায়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। দেখা দিতে পারে মাথা ও চোখে তীব্র ব্যথা।
অনেক বাবা-মা মনে করেন, ছোটবেলা থেকে শরীরের ওপর বেশি চাপ পড়ে এমন খেলাধুলা করলে সন্তান তাড়াতাড়ি বড় হবে ও শারীরিক গঠন ভালো হবে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। সব ধরনের খেলা ছোট্ট শিশুর জন্য নয়। একেক বয়সের মানুষের জন্য একেক ধরনের খেলা উপযোগী।
আপনার সন্তানের জন্য কী ধরনের খেলাধুলা উপযোগী তা চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন। যেকোনো খেলা শিশুর মেরুদণ্ডের জন্য হুমকি হতে পারে। কখনও কখনও মেরুদণ্ড বেঁকেও যেতে পারে।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খাবারদাবার, ঘুম, খেলাধুলা ও সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। মনে রাখা ভালো, একদম ছোটবেলার শিক্ষা দিয়েই পরবর্তীতে শিশুরা পরিচালিত হয়। তাই দৈনন্দিন জীবনে সঠিক পদ্ধতি মেনে চলার অভ্যাস করুন।
এস