দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
স্ক্যাবিস এক প্রকার চর্মজনিত রোগ যা (Sarcoptes scabei) নামক এক প্রকার জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয়। যা ইচ মাইট নামক অতিক্ষুদ্র পোকার আক্রমণে হয়ে থাকে। এর প্রধান লক্ষণ হল শরীরে চুলকানি ও গুটি গুটি র্যাশ ওঠা। স্পর্শের মাধ্যমে সাধারণত এ রোগ ছড়ায়। তাছাড়া রোগীর ব্যবহৃত কাপড় গামছা, বিছানার চাদর ও বালিশ ব্যবহার করলে এ রোগ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা এতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
প্রথমবার সংক্রমণে একজন ব্যক্তির সাধারণত দুই থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। দ্বিতীয় সংক্রমণের লক্ষণগুলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হতে পারে। এই উপসর্গগুলো শরীরের বেশিরভাগ অংশে, যেমন-কব্জি, আঙ্গুলের ভেতর বা কোমরের আশেপাশে উপস্থিত হতে পারে। রাতের বেলা এর চুলকানির তীব্রতা বেড়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে এটি আরো জটিল হতে পারে, এর থেকে ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি, হার্টের রোগ, সেপ্টিসেমিয়া (রক্তে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের প্রবেশ), এমনকি কিডনির সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে।
১. স্ক্যাবিস এর লক্ষন হিসেবে হাত ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে, কব্জিতে, বগল ও ঊরুসন্ধিতে, যৌনাঙ্গে, নাভি ও তার চারপাশে ছোট ছোট দানা দেখা দেয়। তবে এগুলো মুখ ও মাথা বাদে একপর্যায়ে সমস্ত শরীরে হতে পারে।
২. দানাগুলোতে প্রচণ্ড চুলকায় এবং তা রাতে বেশি হয়।
৩. চুলকানো জায়গায় ফোসকা পড়ে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া।
৪. অতিরিক্ত চুলকানির কারণে চামড়া ফেটে যাওয়া।
৫. আগে থেকে আপনার কোনো চামড়ার অসুখ থাকলে সেটা আরো খারাপ হওয়া।
৬. ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা বা ত্বক আঁশের মত হয়ে যাওয়া।
৭. ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি।
১. ইচ মাইট একজন মানুষ থেকে অন্যজনের মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে, এটি হতে পারে সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শের মাধ্যমে, অথবা অন্যের বিছানা, কাপড় বা আসবাবপত্র ব্যবহারের মাধ্যমে।
২. রোগীর ব্যবহৃত কাপড় গামছা, বিছানার চাদর ও বালিশ ব্যবহার করলে এই রোগ হতে পারে।
৩. একইভাবে, এই পোকাগুলো মায়ের থেকে সদ্যোজাতের শরীরে যেতে পারে। কোনো গ্রাহক ছাড়া এই পোকা ৩-৪ দিন অবধি বেঁচে থাকে।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসার অনেক ঔষধ আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ক্রিম, লোশন ও ট্যাবলেট ব্যবহারের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তবে এর পাশাপাশি যাবতীয় গৃহস্থ জিনিসপত্র এবং যারা রোগীর সংস্পর্শে ছিলেন, তারাও চিকিৎসার আওতায় থাকবেন। ঔষধের মধ্যে আছে অ্যান্টিহিস্টামিন এবং অ্যান্টি সংক্রামক ঔষধ। চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার পর আবার চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দিলে পুনরায় তা শুরু করার দরকার হতে পারে।
এসব ছাড়াও কয়েকটি ঘরোয়া উপাদানের সাহায্যে স্ক্যাবিস নিরাময় করা সম্ভব। চলুন সেসব কী কী জেনে নেওয়া যাক:
রসুন
রসুন শক্তিশালী অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট। যা সত্যিকারভাবেই মাইটকে অপসারণ করতে পারে। রসুন সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এটি মাইট দমন করে। ক্রমাগত রসুন লাগানো ও খাওয়ার ফলে স্ক্যাবিস নিরাময় অত্যন্ত কার্যকরীভাবে হয়। এজন্য রসুন থেঁতলে রস বের করে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।
এছাড়া ভ্যন্তরীণভাবে নিরাময়ের জন্য প্রতিদিন ৩-৪ কোয়া রসুন খান। ৩দিন আক্রান্ত স্থানে রসুন লাগানোর পর ২ দিন বিরতি দিন। তারপর আবার লাগান। কারণ ক্রমাগত রসুনের ব্যবহার ত্বক পুড়িয়ে দিতে পারে।
নিমপাতা
স্ক্যাবিস নিরাময়ে নিমপাতা ব্যবহার করা যায়। কারণ নিমপাতায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া নাশক উপাদান আছে। একমুঠো নিমপাতা নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর আক্রান্ত স্থানটি ভালো করে ধুয়ে সেটি লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিরাময় প্রক্রিয়াকে দ্রুত করার জন্য এটি নিয়মিত ব্যবহার করুন।
আবার এক কাপ পানিতে কয়েকটি নিমপাতা দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। তারপর মিশ্রণটি ঘরের তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করে নিয়ে এক চামচ করে দিনে ৩/৪ বার পান করুন। মাইট ও চুলকানি পুরোপুরি দূর করার জন্য ৭-১৪ দিন এভাবে পান করুন।
অ্যালোভেরা
এই শীতল জেল অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট। যা ত্বকের নিরাময় ও পুনরুজ্জীবনের জন্য কাজ করে। এটি ত্বকের উপরিভাগের মাইট অপসারণ করতে পারে। তাজা অ্যালোভেরা জেল নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। এই ঘন জেল মাইটের কার্যকারিতাকে বন্ধ করে এবং তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে। ইনফেকশন দূর করার পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও কাজ করে অ্যালোভেরা জেল।
স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে কয়েকটি সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন-
১. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর সবকিছু গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে।
২. পরিষ্কার বিছানা ও কাপড়ের ব্যবহার।
৩. ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় কাপড় ধোয়া।
এছাড়া স্ক্যাবিস থেকে রক্ষা পেতে, কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চললেই একে রুখে দেওয়া সম্ভব। বিশেষ করে এই রোগ এড়াতে বাচ্চাদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবজ্ঞা না করে সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে। শুধু চুলকানি ভেবে এটি এড়িয়ে গেলে পরবর্তীতে আরো বড় কোনো রোগ হতে পারে। তাই এই রোগ প্রকাশ পেলেই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
এস