দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
অসচেতনতা ও আয়োডিনযুক্ত খাবারের অভাবে থাইরয়েডে ভুগছে দেশের ৫ কোটি মানুষ। বিশেষ করে যেসব বাবা-মা এ রোগে ভুগছেন তাদের শিশুদেরও থাইরয়েডে আক্রান্তের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য প্রাথমিক লক্ষণেই শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা নিতে হবে। সবার আগে গুরুত্ব দিতে তবে প্রতিরোধে।
বুধবার (২৯ মে) বেলা ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডির দি থাইরয়েড সেন্টারে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী "থাইরয়েড মেলা-২০২৪" উপলক্ষে থাইরয়েড রোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, থাইরয়েড সংক্রামক নয় তবে এটি বংশগতভাবেও হয়ে থাকে। দেশে বর্তমানে ৫ কোটি মানুষ নানা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে। জিনগতভাবে প্রতি ২৩শ জনে একজন থাইরয়েড শিশুর জন্ম হচ্ছে। বাবা-মায়ের থাকলে তাদের থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর আক্রান্তের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে প্রতি ১০ জন নারীর একজন এ রোগে ভুগছেন। তাদের প্রধান কারণ, আয়োডিনের ঘাটতি ও নিজের নানা শারীরিক দুর্বলতা।
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল বারী বলেন, থাইরয়েড অসংক্রামক রোগ। এটি নিরব ঘাতক। ফলে লক্ষণ না দেখা দেওয়ায় অনেক রোগী ডায়াগনোসিস করেন না। বোঝার আগেই ধীরে ধীরে শরীরের কার্যক্ষমতা কমে আসে, বিষণ্নতা দেখা দেয়। আর বাবা-মায়ের থাকলে বাচ্চার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ বেশি। তাই, সুস্থ জাতি পেতে হলে সুস্থ প্রজন্ম গড়তে হবে। এজন্য সবাইকে এ রোগ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দিতে হবে রাষ্ট্রকেও।
থাইরয়েড প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতার পরিধি বাড়ানোর বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে দেশের প্রথম এই থাইরয়েড সেন্টারের আয়োজনে থাইরয়েড মেলা হয়ে আসছে। এর মাধ্যমে মানুষকে থাইরয়েড সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করাই মূল লক্ষ্য।
লক্ষণ ব্যাখা করতে গিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়া থেকে হঠাৎ কমে যাওয়া, প্রচুর ঘেমে যাওয়া, শীত বা গরম অসহ্য লাগা, চুল পড়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, পাতলা পায়খানা হলে থাইরয়েডের লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে হবে। এর বাইরে নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক অনিয়মিত হওয়া, বার বার গর্ভপাত বড় কারণ। এছাড়া এক্টিভিটি কমে যাওয়া, স্পিস ডিলে হওয়া ও বেশি বেশি ঘুমাতে চাওয়া, মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্যহীনতা শিশুদের থাইরয়েডের লক্ষণ।
তবে আক্রান্তরা কোথায় গেলে চিকিৎসা পাবে তা নিয়ে অনেক দ্বিধায় ভোগেন বলে জানান ডা. ফজলুল বারী। তিনি বলেন, সংশয়ে থাকার কারণে ৬০ ভাগ রোগী চিকিৎসার বাইরে থাকেন। অথচ চিকিৎসায় দেশে সরকারি-বেসরকারি ২২টি সেন্টার রয়েছে। পাশাপাশি সব চিকিৎসকেরই নূনতম চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু লক্ষণ তেমন না থাকায় অধিকাংশই গুরুত্ব দেননা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ রোগের বিস্তারের প্রথম কারণ আয়োডিনের অভাব। এ ছাড়া বংশগত ও প্রাকৃতিক কারণে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত পুষ্টিও একটা বড় কারণ তথা হাইপো থাইরয়েড বড় সমস্যা। এজন্য প্রচুর পানি, দুধ, শাক, সবজি, টমেটো, বাদাম, বিচি, সামুদ্রিক মাছ বেশি বেশি খেতে হবে। একই সঙ্গে জন্মের পর পরই, মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে, মায়েদের গর্ভধারণের আগে এবং বয়স চব্লিশ বছর হওয়ার পর পরই থাইরয়েড আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
এফএইচ