সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছে। তারা জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছে, জনগণ সেই অধিকার চায়। কিন্তু সরকার অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে।
শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে লক্ষ্মীপুরে লক্ষ্মীপুর টাউন হল মিলনায়তনে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, জনগণ এখন আর আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে চায় না। তারা জাতীয় পার্টির কথা বলে। জাতীয় পার্টি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সরকার যদি জনগণের জন্য কিছু করে থাকে, তাহলে জনগণই সরকারকে মূল্যায়ন করবে।
এ সময় জিএম কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে আপনাদের ভয় কিসের? তিনি আরও বলেন, এ সরকার জবাবদিহিতার কোনো বালাই করে না। নিজেদের ইচ্ছেমতো দলীয়করণ করতে গিয়ে স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। ফলে এ সরকার একনায়ক সরকারে পরিণত হয়েছে।
দেশের মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ একা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয়নি জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, হতে পারে সেইসময় বড় নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছিল। কিন্তু এই দল ছাড়া আরও অনেক দল মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে ভূমিকা রেখেছে। অথচ এখন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার আন্দোলনের একমাত্র দাবিদার বনে গেছে তারা। তাই এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না বলে মনে করে তারা। এজন্যই তারা আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে মানুষ মনে করে না। এদেশের কৃষক শ্রমিক যুদ্ধ করেছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগ ছিল না। তাই মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র দাবিদার আওয়ামী লীগ হতে পারে না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এদেশের মানুষকে বিভাজন করেছে আওয়ামী লীগ। তারা বিভিন্ন নামে একশ্রেণীর মানুষকে সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এদেরকে দিয়ে ভোট ডাকাতি করিয়েছে, অর্থ লুট করিয়েছে, গণমাধ্যম ও মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করিয়েছে। সাধারণ মানুষের এখন ভোট দেয়ার স্বাধীনতা নাই, মুক্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নাই।
জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- আগামী নির্বাচন নাকি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আর বিপক্ষ শক্তির মধ্যে হবে। আমি মনে করি তিনি এটি ভুল বলেছেন। আগামী নির্বাচন হবে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বপক্ষে। এদেশের মানুষ ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বৈষম্যমুক্ত দেশ ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আপামর মানুষ স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু এদেশ থেকে এখনও বৈষম্য দূর হয় নাই।
তিনি বলেন, এ সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাট করেছে। দেশে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। চরম অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করলেও মানুষ তা প্রকাশ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিজেদের দুঃখ কষ্ট নিয়ে মতপ্রকাশ করলেও তাদের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন নেমে আসে।
জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, একমাত্র জাতীয় পার্টি সাধারণ মানুষের কথা শুনতে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে চেষ্টা করছে। মানুষ তাদের ইচ্ছেমতো কথা বলতে পারছে জাতীয় পার্টির কাছে। তাই আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে। জনগণের অধিকাংশ রায় নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে জনগণের সরকার গঠন করবে।
সম্মেলনে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোহাম্মদ উল্যাহর সভাপতিত্বে ও জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
বক্তব্যে চুন্নু বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ে তামাশায় মেতেছে। একদল বলছে রাজপথ দখল নেবে, আরেক দল বলছে রাজপথ মুক্ত করবে। অথচ দেশের সাধরণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যাথা নেই। আজ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশের রিজার্ভ ফান্ড আাশাতীতভাবে কমে গেছে। মানুষের ভোটাধিকার নেই, নাগরিক অধিকার নেই। এ পরিস্থিতিতে শুধু জাতীয় পার্টি চিন্তা করছে মানুষের জীবনমান আর মানুষের মুক্তির পথ নিয়ে।
সব রাজনৈতিক দল নিয়ে সংলাপে বসে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আলহাজ্ব সোলায়মান আলম শেঠ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি,লেঃ জেঃ (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি প্রমুখ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এরপর দ্বিতীয় অধিবেশনে লক্ষ্মীপুর জেলার নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক জনের নাম প্রস্তাব সমর্থন আসে। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জেলা কমিটির নতুন নেতা গঠনের বিষয়ে ঢাকায় ফিরে আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এরপর প্রায় ৮ বছর পরে এদিন সংগঠনের উক্ত ইউনিটের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।।
এইউ