সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
পদ্মার দুর্গম চরের বাসিন্দাদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে অচল হয়ে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। ফলে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি স্থানীয়দের কোনো কাজেই আসছে না।
এদিকে, একদিনের জন্য রোগী পরিবহন না করা হলেও তোলা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি খরচ। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানির হওয়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, সূতালড়ী ও আজিমনগর ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে। জরুরি প্রয়োজনে এসব এলাকার বাসিন্দারা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। দুর্গম চরের এসব বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন। কিন্তু ব্যবহার না হওয়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মা নদীর পাশেই উপজেলার গোপীনাথপুর নয়াবাজার এলাকায় ইছামতি নদীতে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ভাসছে। সামনের একটি গ্লাস ভাঙা, চারপাশে শেওলা জমে আছে। ভেতরে ময়লা-আবর্জনা। তালাগুলোতে মরিচা ধরা। এতে সহজেই অনুমান করা যায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির এখন বেহালদশা।
ছবি তোলার সময় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অ্যাম্বুলেন্সটির বেহাল অবস্থার কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, দীর্ঘ তিন বছর ধরে একই স্থানে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি। শুষ্ক মৌসুমে মাটির ভেতরে আটকে ছিল। বর্ষা আসার পর ভাসছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এর ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
যোবায়ের নামে এক বাসিন্দা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের অ্যাম্বুলেন্স প্রথমদিকে অনেক চকচকে ঝকঝকে ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহেলায় অ্যাম্বুলেন্সটি অচল হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় মাদকসেবী আর বখাটেরা আড্ডা দেয় এখানে। তিনি অ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুত সচল করে রোগী পরিবহনে ব্যবহারের দাবি জানান।
আরিফুর রহমান নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, হরিরামপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন দুর্গম চরাঞ্চলে। এসব এলাকার মানুষের যাতায়াতে ইঞ্জিনচালিত নৌকাই ভরসা। জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে তাদের পদ্মা পাড়ি দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হয়। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি সচল থাকলে দ্রুত চিকিৎসাসেবা নিতে পারতো চরবাসী। প্রধানমন্ত্রীও সেই উদ্দেশ্যে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে সে উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এদিকে, একদিনের জন্যও রোগী পরিবহন না করা হলেও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি খরচ তুলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি বাবদ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মধ্যে দুই অর্থবছরে খরচ করা হয়েছে যথাক্রমে ৯৪ হাজার ৬৫৬ এবং ৩৮ হাজার ৩৯ টাকা। তবে রোগী পরিবহনের কোনো তথ্য নেই জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।
এ বিষয়ে জানতে গেলে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না বলেন, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি কার্যত অচল। ইঞ্জিনও বিকল রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সচল করার চেষ্টা করা হবে।
অচল অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি খরচ তেলা প্রসঙ্গে ডা. মেহেরুবা পান্না জানান, বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। তবে তার যোগদানের আগের ঘটনা এটি। তাই এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য একজন স্থায়ী চালক আছেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স সচল না থাকায় চালক শাকিল আহমেদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সড়ক পথের অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছেন।
জেবি