সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
টানা চার দিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলার পাঁচ শতাধিক গ্রামের অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি থাকায় গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও খাবার পানির সংকট। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ও পানিতে তলিয়ে থাকায় চলাচলের কোনো উপায় নেই। এতে এসব গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। একই সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ জানান, রোববার বিকেল ৩টা থেকে সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮১ মিলিমিটার। আগামী আরও তিনদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
জেলার টানা বৃষ্টি ১৫টি ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চকরিয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ঈদগাঁও উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন রয়েছে। অপরদিকে ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও, জালালাবাদ ও পোকখালী ইউনিয়নের ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন হয়ে পড়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ঈদগাঁও নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে সামুদ্রিক জোয়ারের ঢেউতে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মেরিন ড্রাইভের কিছু অংশে জিওব্যাগে বালির বাঁধ তৈরি করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও নতুন করে আরও কয়েকটি স্পটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শহরের সড়কের ওপর দিয়ে পানি চলাচল করছে।
তবে এখনো কোনো গ্রামে পানি ওঠেনি। নিচু এলাকার লোকজন নৌকা দিয়ে চলাফেরা করছে। এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে নিচু এলাকার গ্রামগুলো প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখনো কোনো গ্রাম প্লাবিত হয়নি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, জেলায় ৫৪ হাজার ৫০ পরিবার পানিবন্দি, হতাহত এড়াতে মানুষকে নিয়ে আসা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এই পর্যন্ত জেলায় ৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানান, পাবর্ত্য জেলা ও চকরিয়ার পাহাড়ি ঢল নেমে আসার মাধ্যম মাতামুহুরি নদী। পাহাড়ি ঢল, বৃষ্টি এবং জোয়ারের ঢেউতে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। চকরিয়ার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে পৌরসভাসহ ১২ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে কাকড়া, লক্ষ্যরচর, বুমুবিল ছড়ি, সুরেজপুর-মানিকপুর, কৈয়ারবিল, কোনাখালী ইউনিয়ন। বৃষ্টি না থামার কারনেবন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার সদরের ঝিলংঝা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা নিচু হাওয়ায় পানির নিচে আছে রয়েছে। তাদের সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, টানা চারদিনের বৃষ্টিতে ১২ ইউনিয়নের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্নস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এদিকে পুরো জেলায়, উখিয়া ও চকরিয়ায় পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও চারজন। সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মা-মেয়ে ও চকরিয়ার বড়ইতলী এলাকায় দুজনের মৃত্যু হয়।
জেবি