দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও জীবিত ফেরা হলো না ২৩ বছর বয়সী মিলন হোসেনের। অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলন হোসেনকে অপহরণ করেছিল তার বন্ধুসহ একটি চক্র। অবশেষে সেই বন্ধুর বাসার পাশে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের নিচ থেকে পাওয়া গেল মিলনের গলিত মহদেহ। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, অপহরনকারীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বুধবার গভীর রাতে সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের শিবগঞ্জ মহেশপুর বিট বাজার এলাকার সিজান আলীর বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের নিচ থেকে মিলনের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা সিজান নামের এক আসামির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এদিকে হত্যার বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে এলাকাবাসীরা। পরে জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
নিহত মিলন হোসেন (২৩) ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে। তিনি দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন:- সদরের জামালপুর ইউনিয়নের মহেশপুর বিটবাজার এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সিজান আলী (২৮) ও আরাজি পাইকপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ (২৫) ও সদরের সালন্দর ইউনিয়নের শাহীনগর তেলিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রত্না আক্তার রিভা (১৯)। এসময় মুরাদের হেফাজত থেকে ৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, অনলাইনে অজ্ঞাত এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় মিলন হোসেনের। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পেছনে অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে দেখা করতে এসে নিখোঁজ হন মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টার দিকে মিলনের পরিবারকে মুঠোফোনে অপহরণের বিষয়টি জানানো হয়। অপহরণকারীরা ১২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা দাবি করে। পরদিন দুপুরে মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। পরে অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। এরপরের দিন মুক্তিপণের দাবি বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখে। ৩ দিন পর ১৫ লাখ আর সবশেষ ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
পরে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করে নিখোঁজ মিলনের স্বজনরা।
মিলনের বাবা পানজাব আলী বলেন, থানা-পুলিশের কাছ থেকে ছেলেকে উদ্ধারে যথেষ্ট সাড়া না পেয়ে ছেলের মুক্তির জন্য ২৫ লাখ টাকা জোগাড় করেন। অপহরণকারীরা ৯ মার্চ রাত ১০টার ঢাকাগামী ট্রেনে টাকা নিয়ে উঠতে বলে। এরপর চলে মুঠোফোনে যোগাযোগ। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের সেনুয়া এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে টাকার ব্যাগটি বাইরে ছুড়ে ফেলে দিতে বলে অপহরণকারীরা। মিনিট দশেক পর টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তারা। সে সময় মিলনকে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে বলে তথ্য দেয় অপহরণকারীরা। কিন্তু খোঁজাখুঁজি করেও সেখানে মিলনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
অপহরণের ৩দিন পরে ২৬ তারিখে মিলনকে হত্যা করে অপহরণকারীরা। তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারের কাছে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ বাগিয়ে নেয় অপহরণকারী চক্রটি। এ ঘটনায় সংবাদ প্রচার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলন হোসেনকে উদ্ধারে মাঠে নামেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মামুনুর রশিদ বলেন, বুধবার রাতে মিলনকে অপহরণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুজন মিলনকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিলনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিলাম আমরা। কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরেই মিলনের লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতের আবেদন করা হয়েছে। আর এ ঘটনায় যদি আরও কেউ যুক্ত থাকে তাহলে তাদেরকেও আইনেও আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এফএইচ/