সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বাগেরহাটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজ দলের ৮ সদস্যের বাড়িতে আগুন দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। হামলা-পাল্টা হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদাইড় গ্রামে বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বিকেলে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর থেকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন ওরফে রুহুল মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা যায়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মাঝে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে এই বিরোধ চরমে পৌঁছায়। সব শেষ সোমবার রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে মারপিট ও মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়।
ওই ঘটনার জেরে বুধবার দুপুরে ও বিকেলে উভয় পক্ষের লোকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে শতাধিক লোকজন রুহুল মেম্বার ও তার ৭ ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে পুরে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় রুহুল মেম্বারসহ তার ৮ ভাইয়ের বাড়ি-ঘর।
রাত ৮টায় সরেজমিন ঘুরে কয়েকটি ঘর ও কুটোর পালায় আগুন দেখা য়ায়। রুহুল মেম্বারসহ তার ৮ ভাইয়ের বসতঘরের সব মালামাল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ৬টি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিস পুড়ে গেছে। আগুন নেভানোর জন্য স্থানীয়দের দেওয়া পানি রয়েছে ঘরের মেঝেতে। পুরুষ শূন্য বাড়িগুলোতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বিলাপ করছেন। বসতঘরের বাইরেও হামলা ও ভাংচুরের ক্ষত চিহ্ন ও আগুন দেখা গেছে। এছাড়া গোয়াল ঘর, হাস-মুরগির খোপ ও খড়ের গাঁদায় আগুন দেখা গেছে। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চিরুলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের ব্রিজের ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়।
পুড়ে যাওয়া রুহুলের পরিবারের সদস্যদের দাবি, মোস্তাফিজের লোকজন কয়েকদিন ধরে আমাদেরকে মারধরের চেষ্টা করছিল। এজন্য আমাদের পুরুষরা গা ঢাকা দিয়েছিল। আজকে বাড়ির মধ্যে এসে আমাদের সবশেষ করে দিয়ে গেল।
রুহুল মেম্বার স্ত্রী রজিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী রুহুল আমিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হতে চায়। প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর হামলা করে বাড়িতে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়। এক স্বৈরাচার খেদায়ে দেশে এ কোনো স্বৈরাচার আনছে। সাধারণ মানুষজন নিরিবিলি থাকতি পারতেছে না।
তিনি অভিযোগ করেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালামের লোক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ইমরান, কামরান, মাহবুব, মাসুমসহ স্থানীয়রা তাদের বাড়ি ঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
রুহুল মেম্বারের ছোট বোন ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমার ভাই তালিম ভাইয়ের গ্রুপ করিছিল। প্রতিপক্ষরা বাড়িতে হামলা করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরও রক্তাক্ত জখম করেছে। আমরা বলেছি ঘরে শিশুরা আছে, তাও কোনো ছাড় দেয়নি, আগুন দিয়ে দিছে। পুলিশ-আর্মি দাড়াইয়ো রইছে, আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিলো। তারা কোনো সাহায্য করেনি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আগের দিনের ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রুহুল মেম্বারের ভাই আওয়ামী লীগের ক্যাডার শেখ রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে সোমবার রাতে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী ঢাল শড়কি ও ধারালো দা লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের ৫ নেতাকর্মীকে আহত করে। এসময় তারা আমাদের ৫টি মোটরসাইকেল ও একটি অটো গাড়িসহ একটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
মোস্তাফিজুর রহমান গ্রুপের নেতা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুম মোল্লা বলেন, সোমবার রাতে ভাংচুর করা মোটরসাইকেল নিয়ে বুধবার দুপুরে থানায় যাচ্ছিল আমার ভাই মামুন মোল্লা। তখন রুহুল মেম্বারের লোকজন তার ওপর হামলা করে। আমরা তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছিলাম। এরই মধ্যে বিকেলে আমার আরেক ভাই মাহমুদ মোল্লাকে কুপিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায় প্রতিপক্ষরা। সন্ধ্যার দিকে তারা ঢাল শরকি নিয়ে আবারও বের হয়, তখন পুলিশ ছিল। এসময় আমাদের লোকজন তাদেরকে ধাওয়া করে। পরে তারা নিজেরা বাড়িতে আগুন দেয়।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। গেল পরশুও মারামারি হয়েছে। এর জেরেই বুধবার দুইপক্ষে আবার মারামারি করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরএ