সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
গাইবান্ধা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনে গ্রাহকদের কাছে জোরপূর্বক অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করাসহ দালাল-সিন্ডিকেটদের প্রত্যেকটি অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন সদর সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান।
দীর্ঘদিনের দালালি এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় সব অপকর্ম এবং অবৈধভাবে অর্থ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাব রেজিস্ট্রারকে বিভিন্নভাবে বেকায়দায় ফেলানোর চেষ্টা করছে সংঘবদ্ধ চক্রটি।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালের দিকে গাইবান্ধা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্রার মো. মেহেদি হাসান স্বাক্ষরিত গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মারফত বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গাইবান্ধা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছিলেন শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। যা বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। যা নিয়ে একাধিকবার মানববন্ধন-বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচিও পালন করেছে গাইবান্ধার সচেতন নাগরিক সমাজ।
তবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ওই সকল সিন্ডিকেট ও দালালদের নিমূর্ল করাসহ দপ্তরে সকল ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জনসাধারণকে জানাতে পদক্ষেপের ইতিবাচক দিকগুলো সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরতে অনুরোধ জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
মেহেদি হাসানের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলো- দীর্ঘদিন ধরে দলিল সম্পাদনে দলিল লেখক সমিতির নাম করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করা, দপ্তরটির রেকর্ড রুমে অফিস করণিক ব্যতিত অন্য যে কোনো ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, সম্প্রতি বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার মেহেদি হাসানের স্বাক্ষর জাল করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জাবেদা নকল সরবরাহের দায়ে দালালের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দেওয়া, ২০২৩ এর পূর্বের সাব রেজিস্ট্রারদের সময়কালে পেঅর্ডার/দলিল জমা না করে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা উদ্ঘাটন করাসহ জালিয়াতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং আরও বিস্তারিত জানতে তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানি বন্ধে বালামভুক্ত না হওয়া ২৩০টি দলিল বালামভুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা, সেবা প্রত্যাশি ও জনভোগান্তি কমাতে ১৯৮০ সালের পূর্ববর্তী সময়ের প্রায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম সূচিবহি সমূহের পুর্নকলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি ও আর্থিক আবেদন জানানো হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও অত্র সাব রেজিস্ট্রি অফিসকে দালাল ও সিন্ডিকেট মুক্ত করতে সরাসরি সংশ্লিষ্টদের মৌখিক এবং নোটিশের মাধ্যমে সকলকে সতর্ক করে নোটিশ দপ্তরের বিভিন্ন অবকাঠামোতে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাব রেজিস্ট্রার তার নিজের বিরুদ্ধেও যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে তা লিখিত আকারে জানাতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান করা হয়েছে বলেও এই বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সিন্ডিকেট-দালালদের দৌরাত্মে বাধা দেওয়ার বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনিয়মের প্রত্যেকটি স্থানে বাধা দেওয়ায় তারাও (দালাল-সিন্ডিকেট) মেহেদি হাসানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যাভাবে বেকায়দায় ফেলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞপ্তির শেষ অংশে সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসকে দুর্নীতি নির্মূল করতে গণমাধ্যমকর্মীদের পরামর্শ চাওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের অপেশাদারমূলক আচরণ এবং তার প্রশ্নের ধরণ কর্মকর্তাকে হতাশ করেছে জানিয়ে ওই মিথ্যা সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। এছাড়া সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমে যার অভিযোগ এবং প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানানো হয়।
পদক্ষেপের বিষয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রবীন দলিল লেখক মহসিন আলী সরকার, আবুল হোসেন, আমিনুল ইসলামসহ আরও একাধিক দলিল লেখক বলেন, মেহেদী স্যার আসার পর থেকে আমরা অনেক শান্তিতে আছি। আমাদের ওপর এখন কোনো জোর-জবরদস্তি নাই। জুলুম নাই। এরআগেও অনেক অফিসার গেছেন। কিন্তু এবার এই স্যারের নানা পদক্ষেপের কারণে ধীরে ধীরে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসার মো. মেহেদী হাসান বলেন, দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে সাথে আমি অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই এই অফিসের দালাল-সিন্ডিকেট ও অনিয়ম বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যারা অন্যায়ভাবে সুবিধা নিয়েছিল, তারা আমাকে বেকায়দায় ফেলানোর চেষ্টা করছে। এসময় তিনি সত্য তথ্য সাপেক্ষে প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধেও সংবাদ প্রকাশের কথা জানান। এছাড়া অত্র অফিসের দুর্নীতি ও দালালের দৌরাত্ম বন্ধে গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সাব রেজিস্ট্রার মেহেদি হাসানের এসব পদক্ষেপের বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলাম বলেন, তিনি যেসব সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। মেহেদী হাসান দীর্ঘদিনের একটি সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছেন। যার ফলে বর্তমানে মানুষ হয়রানির স্বীকার হচ্ছে না এবং কোথাও অতিরিক্ত অর্থও দেওয়া লাগছে না।
আরএ