সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ফায়ার ফাইটার পদে বগুড়ায় চাকরি করছেন রেজা মিয়া (৩৪) নামের এক ব্যক্তি। তিনি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের দণি কাঠুর গ্রামের আফতাব আলীর ছেলে। রেজা মিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি পাশ।
জানা যায়, রেজা মিয়া গত ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সে ৪র্থ শ্রেণি (ফায়ার ফাইটার) পদে চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার আদমদিঘি ফায়ার স্টেশনে চাকরি করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার কোটা যাচাই-বাছাই শুরু হয়। এতে দেখা যায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার কোটা দিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই সরকারি চাকারি করে আসছেন রেজা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ফায়ার ফাইটার রেজা মিয়ার পরিবারের কেউ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। কিভাবে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়ে বা কোটায় চাকরি হয়েছে তা অনেকেরই অজানা। তবে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ হওয়ায় পর থেকে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হলো তার। আর কোথায় বা পেলো এই সার্টিফিকেট।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনলাইনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৩২ জন। এই তালিকা মতে আফতাব আলীর ঠিকানা অনুযায়ী কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম পাওয়া যায় নাই।
তবে স্থানীয়রা জানান, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করে আসছেন রেজা মিয়া। সরকারের দেওয়া বেতনও উত্তোলন করছেন। অথচ তার পিতা আফতাব আলী মুক্তিযোদ্ধা নন। জাল মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে চাকরি নিয়েছেন তিনি। চাকরি দেওয়ার সময় এজন্যই তো যাচাই-বাছাই করেনি কর্মকর্তারা। যেসব কর্মকর্তা দায় সারাভাবে এ রকম কর্মকাণ্ড করেছেন তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে রেজা মিয়ার বড় ভাই খাজা মিয়া জানান, তার পরিবারের কেউই মুক্তিযোদ্ধা কখনই অংশগ্রহণ করেনি। চাকরি নেওয়ার সময় ভুল করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অপশনে টিক প্রদান করা হয়েছিল। এজন্য তার ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হয়েছে। তবে সংশোধনের জন্য অফিসে তদবির চলছে। এসময় তার পিতা মো. আফতাব আলির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অসুস্থতার কথা বলে দেখা করতে দেননি খাজা মিয়া। এমনকি রেজা মিয়ার সঙ্গেও মোবাইল ফোনে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
দক্ষিণ কাঠুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করে চাকরি ও বেতন উত্তোলন করে আসছেন রেজা মিয়া। অথচ মেধাবীরা মেধা যাচাই করেও চাকরি পায় না। তার পিতা আফতাব আলী মুক্তিযোদ্ধা নন। অথচ জাল মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে চাকরি নেওয়ার সময়।
ফুলছড়ি উপজেলা সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হারিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টিই কলঙ্কিত করেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আফতাব আলী অংশ না নিয়ে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পায় তা আমার বোধগর্ম নয়। ফুলছড়ি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৩২ জন। এই ২৩২ জনের তালিকার মধ্যে তার কোনো নাম নেই।
বগুড়া আদমদিঘি ফায়ার স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, গত ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদান করে রেজা মিয়া। ভুল করে মুক্তিযোদ্ধা অপশনে টিক মার্ক করার কোনো সম্ভাবনা নাই। সেই সঙ্গে রেজা মিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার ৮ম শ্রেণি এবং পিতার মুক্তিযোদ্ধার সনদের সব কাগজ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ আটটি দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। এরপর যোগ্যতা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ভিত্তিতে চাকরি প্রদান করা হয়েছে। তবে পিতার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করে চাকরি নিয়েছেন কিনা সেই বিষয়টি তিনি অবগত নন।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ফায়ার ফাইটার পদে চাকরির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তদন্ত পূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএ