সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ঢাকার সাভারে নৃশংসভাবে হত্যা হওয়া ঠাকুরগাঁওয়ে বাবুল, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম ও তাদের ১৪ বছরের ছেলে মেহেদী হাসান জয়ের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। তবে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনেরা।
বাবুলের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুড়া ফুলবাড়ী গ্রামে। গ্রামের মৃত সইর উদ্দিনের চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে বাবুল সবার ছোট।
গত শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে মুক্তার হোসেন বাবুল, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম (৪০) ও ছেলে মেহেদী হাসানের (১৪) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ময়নাতদন্ত শেষে আজ সোমবার ভোরবেলায় তাদের লাশ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার গরুড়া ফুলবাড়ী গ্রামে বাবুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে শামিয়ানার নিচে স্বজনরা বসে আছেন। কারও মুখে কথা নেই। নিঃস্তব্ধ চারপাশ।
বাবুলের বড় ভাই আইনুল হক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবুল পরিবারের সবার ছোট, এ কারণে সে সকলের আদরের ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে তাকে নৃশংসভাবে মরতে হবে আমরা কখনও এমনটা ভাবিনি।
আইনুল বলেন, প্রায় ১৭ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম চলে যান ছোট ভাই বাবুল। সেখানে পোশাক তৈরির একটি কারখানায় চাকরি শুরু করে। কয়েক বছর পরে সেখানে সুমি আক্তার নামের এক সহকর্মীকে বিয়েও করেন। তাদের একটি ছেলে সন্তানও হয়। একদিন কাউকে কিছু জানিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান সুমি। এরপর ছেলে মেহেদীকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যান বাবুল।
আশুলিয়ার পোশাক তৈরি কারখানায় কাজ নেন। সেখানে শাহিদা বেগমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে বিয়ে হয় তাদের। শহিদার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা মধ্যপাড়া গ্রামে। সেই থেকে বাবুল শাহিদাকে নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় থাকতে শুরু করেন। আগের সংসারের ছেলে মেহেদী চাচার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছিল। কিন্তু গত ঈদুল ফিতরের পর বাবুল ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যান।
বাবুলের বড় বোন মরিয়ম বেগম বললেন, প্রতিবছর দুই ঈদে পরিবার নিয়ে গ্রামে আসতেন বাবুল। সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতো। এবারের ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর আয়োজনে বাড়ি আসার কথা ছিল বাবুলের। বাবুলসহ তার পরিবার গ্রামের বাসায় আসবে এজন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু বাবুল আসবে না বলে বড় ভাইকে (আইনুল) জানিয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাবুলের সঙ্গে তাদের শেষ কথা হয়। এরপর মুঠোফোন বন্ধ হয়ে যায়।
বাবুলের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ হাজী বলেন, বাবুলদের সঙ্গে কারও কোনো ঝামেলা ছিল না। কেন বাবুলসহ তার পরিবারকে এইভাবে নৃসংশভাবে হত্যা করা হলো?
বাবুলদের বাড়ির প্রায় ৬০০ মিটার দূরে রামদেবপুর ফুলবাড়ী কবরস্থান। সেখানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে মেহেদী, বাবুল ও শহিদাকে। কবরের পাশে ছেলে লোকমান আলীকে নিয়ে কবরের বেড়া তৈরি করছিলেন বাবুলের বড় ভাই ইউসুফ আলী।
এসময় লোকমান আলী বলেন, মেহেদী (বাবুলের ছেলে) আমাদের সঙ্গে খেলাধুলা করত। সাত দিনের জন্য ঢাকায় গিয়ে আর ফিরে আসেনি। আজ তাকে মা-বাবার সঙ্গে কবরে রেখে দিলাম।’
বাবুলের বড় ভাই আইনুল হক বলেন, ভাইটা চাকরি ছেড়ে পরিবার নিয়ে এখানে চলে আসতে চাইছিল। কিন্তু তারা আর জীবিত আসলো না, আসলো লাশ হয়ে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, বাবুলের বিরুদ্ধে এলাকায় কখনও কোন ধরনের অভিযোগ শুনিনি। সে ভালো একজন মানুষ ছিল। কিন্তু কি এমন হয়েছিল যে এইভাবে গলা কেটে পুরো পরিবারকে হত্যা করা হলো! আমরা এর সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিচার চাই।
জেবি