সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
নওগাঁয় ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙনের ফলে জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে যায় শতাধিক গ্রাম। মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্তমানে নদীর পানি কমায় রাণীনগর ও মান্দা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে আত্রাই উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে খাবার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গত বুধবার রাণীনগরের ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি ও কৃষ্ণপুর নামক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে পানির চাপে ভেঙে গেছে নান্দাইবাড়ি নামক স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৬ মিটার। ফলে নওগাঁ-আত্রাই-নাটোরের সঙ্গে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া নান্দাইবাড়ি, কৃষ্ণপুর, মালঞ্চিসহ ওই এলাকার প্রায় ৮ গ্রামের মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্তমানে বৃষ্টি না হওয়ায় ছোট যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যা কবলিত এলাকার বাড়িঘর থেকে নামতে শুরু করেছে পানি।
অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ি-কালীগঞ্জ সড়কের বলরামচক নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৫ মিটার, আত্রাই-সিংড়া সড়কের জগদাস নামক স্থানে ১৬ মিটার ও পাশাপাশি শিকারপুর নামক স্থানে ৫৭ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৮০টি গ্রাম বর্তমানে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়া আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়কের নন্দলালী নামক স্থানে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশটুকু বন্ধ করায় রক্ষা পেয়েছে ওই এলাকার অনেক গ্রামের মানুষ, ফসল ও পুকুরের মাছ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে যে বন্যায় রাণীনগর উপজেলায় ৮৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১.৫০ হেক্টর সবজির ক্ষেত, মান্দা উপজেলায় ৮০ হেক্টর আমন ধান ও ১১ হেক্টর সবজি ক্ষেত এবং আত্রাই উপজেলায় ৩১০ হেক্টর আমন ধান বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বন্যায় ভাঙা স্থানগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং মেরামত কাজ সঠিকভাবে বুঝে নিতে স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানান। এসময় নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফইজুর রহমান তার সঙ্গে ছিলেন।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, বর্তমানে আত্রাই নদীর পানি কমায় কোনো পয়েন্টেই আর বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। ছোট যমুনার নদীর পানি কমার ফলেও শুধুমাত্র লিটন ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩০ সেমি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা দিনরাত ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে এবং নতুন করে কোথাও ভেঙে যাওয়ার আগেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া রাণীনগরের ভেঙে যাওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুতই এই সড়কটি আবার ব্যবহার করতে পারবে স্থানীয়রা। নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক রাসেল বলেন, বাঁধগুলো ভাঙার পরই সড়ক বিভাগের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। তাই ভেঙে যাওয়া বাঁধের মেরামত কাজ সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সড়কের পাকাকরণ কাজ শুরু করব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কৃষকদের বিকল্প ফসল চাষের পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রেখেছি। আর এখনও আমন ধান রোপণের সময় থাকায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমন ধান রোপণ করা সম্ভব।
জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা জানান, জেলায় গত কয়েকদিনের বন্যায় ৩টি উপজেলার পানিবন্দি পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য এখন পর্যন্ত (শনিবার) আত্রাই উপজেলায় ২৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা, মান্দা উপজেলায় ১৪ মেট্রিক টন চাল ও রাণীনগর উপজেলায় ৪ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যেভাবে নদীর পানি কমতে শুরু করেছে তাতে আশা করা যাচ্ছে আর দুই-একদিনের মধ্যেই রাণীনগর ও মান্দা উপজেলার বাড়িগুলো থেকে পানি নেমে যাবে। এতে করে দ্রুতই নওগাঁর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এইউ