সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বান্দরবানে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় সাড়ে তিন হাজার ব্রয়লার মুরগির মৃত্যু হয়েছে। আর এতে এক খামারির ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শংকর ব্রয়লার ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিছু দূরে ফার্মের প্রবেশমুখে মাটিতে পড়ে রয়েছে অসংখ্য মৃত ব্রয়লার মুরগি। এত মুরগির এমন মৃত্যুতে নির্বাক শংকর ব্রয়লার ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারি স্বত্বাধিকারী শংকর দাশ (টিকলু)।
তিনি জানান, সোমবার(১১ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। দীর্ঘ সময় ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে ফার্মের ৩ হাজার ৫০০ ব্রয়লার মুররির মৃত্যু হয়েছে। এতে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার।
তিনি আরও জানান, ২০১৮ সাল থেকে কুহালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে ব্রয়লার মুরগির পালনের উদ্দেশ্যে একটি খামার তৈরি করেন তিনি। দীর্ঘদিন ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারলেও করোনার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ থাকায় ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। আবার রানীক্ষেত রোগের প্রাদুর্ভাবে ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। আগস্ট মাসের বন্যায় ২ হাজার ৫০০ ব্রয়লার মুরগির মৃত্যু হয়, সেই সময় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয় এবং সর্বশেষ বিদ্যুৎ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোক করে ৩ হাজার ৫০০ মুরগির মৃত্যু হয়েছে। আর এতে নতুন করে আবার ১০ লাখ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি।
শংকর দাশ বলেন, কয়েক দফা লোকসানে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণের টাকা নিয়েছি আবার সর্বশেষ নিজের সব স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে স্বর্ণের দোকান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যবসা শুরু করেছি, কিন্তু এবারের লোকসানে আমার সব শেষ।
কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংপু মারমা বলেন, খামারগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে খামারিদের এমন ক্ষতি আরও বাড়বে। জেলা পোল্ট্রি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, আমাদের একটি সমিতি রয়েছে আর সমিতিতে সদরের প্রায় ৬০টি ব্রয়লার খামার ব্যবসায়ী রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবানে মরার ওপর খড়ার ঘায়ের মতো ব্রয়লার ব্যবসায়ীদের জীবন। একে একে ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে আর তার ওপর বন্যায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে খামারে। আর সর্বশেষ বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং অসংখ্য মুরগির মৃত্যুতে ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
মো. আব্বাস উদ্দিন আরও বলেন, বান্দরবানে অসংখ্য পোল্ট্রি গড়ে উঠলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামারিদের পাশে থাকে না, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামারিদের কোনো কাজেই আসে না।
এদিকে সদর উপজেলার উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলোক কুমার চক্রবত্তী জানান, সদরে নিবন্ধিত ৩৩টি ও অনিবন্ধিত ৪০টি ব্রয়লার খামার রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রয়লার খামার পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি সঠিকভাবে নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বায়তুল ইজ্জত নামক স্থানে বিদ্যুতের ৩৩ কেভি লাইনের ওপর একটি গাছ ভেঙ্গে পড়ে। এতে জেলা সদরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বন্ধ থাকার কারণে পুরো বান্দরবান রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে থাকে।
এইউ