সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
জ্যামের শহর ঢাকা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজটে নগরবাসীর জীবন নাজেহাল। যানজটই যেন এই নগরীরর মানুষের নিত্যসঙ্গী। শহরের প্রতিটি সড়কে সারাদিন যানজট লেগেই থাকে। দিন দিন এ যানজট তীব্র হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। তারমধ্যে একটি হচ্ছে যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো।
শহরের প্রায় বেশিরভাগ কোম্পানির বাসই ট্রাফিক আইন অমান্য করে চলাচল করে। এরমধ্যে অন্যতম রাইদা ও তুরাগ। টঙ্গী ও উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চলাচল করা এই বাসগুলো সড়কের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যানজট সৃষ্টি করছে এই বাসগুলোর চালকরা। মানছেন না ট্রাফিক আইন।
গত সোমবার (৩১ জুলাই) এই প্রতিবেদক যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে রাইদার একটি বাসে ওঠেন। গন্তব্য মালিবাগ। এই দূরত্বের মধ্যে বাসটি কমপক্ষে ৩০ বার রাস্তার বিভিন্ন স্থানে থেমেছে এবং যাত্রী তুলেছে। এর মধ্যে আবার রাইদা ও অন্য একটি বাসকে প্রতিযোগিতা করতে দেখা যায় এবং মাঝ রাস্তায় বাস থামিয়ে দুই বাসের চালককে তর্ক করতেও দেখা গেছে। এ সময় রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এক চালক অন্য চালকের ওপর দোষ চাপান। তবে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মাঝ রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন রাইদার একজন চালক
একই স্থান থেকে গত মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাইদার আরেকটি বাসে ওঠেন এই প্রতিবেদক। এদিনও একই ঘটনা দেখা যায়। রাস্তাজুড়ে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানো হচ্ছে। এছাড়া খামখেয়ালি মতো এলোমেলো গাড়ি চালাচ্ছিলেন বাসের চালক। এ সময় পেছন থেকে অন্য গাড়ির চালকেরা রাস্তা ছাড়তে চেঁচামেচি করলেও বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করেননি রাইদার চালক।
রাইদার একজন চালক সানি বেপারির কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনে আমার কোম্পানির আরেকটা বাস আছে। সেটাকে তো ওভারটেক করা যাবে না। তাই আস্তে-ধীরে যাচ্ছি।
রাস্তা ফাঁকা অথচ আপনি এভাবে গাড়ি চালানোর কারণে তো পেছনে জ্যাম সৃষ্টি হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু করার নাই মামা। সবাই এভাবেই চলে। আমার কোম্পানির সামনের বাসকে ওভারটেক করলে আমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। তাই আমাকে আমার মতোই যেতে হবে। এখন জ্যাম পড়ল না পড়ল না, সেটা আমার দেখার বিষয় না।
যেখানে ট্রাফিক পুলিশ আছে সেখানে সুন্দর মতো গাড়ি চালাচ্ছেন, রুল মানছেন, আর সারা রাস্তায় এলোমেলো গাড়ি চালাচ্ছেন এর কারণ কী? উত্তরে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সামনে তাদের রুল না মানলে তো মামলা দিয়ে দেবে। তাই সে সব স্থানে সতর্ক থাকতে হয়। শুধু আমি না, সব বাসের ড্রাইভাররাই এমন করে।
এ সময় তার কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। কিন্তু তিনি সেটা দেখাতে পারেননি।
রাস্তার মধ্যে বাস থামিয়ে তর্কে জড়ালেন দুই চালক
একই দিন মালিবাগ থেকে তুরাগ নামে অন্য একটি বাসে উঠলে একই দৃশ্যের দেখা মিলে। লক্কর-ঝক্কর বাস খামখেয়ালি মতো চলছে, ব্রেক কাজ করে না। মানছে না ট্রাফিক আইন। এছাড়া সারা রাস্তায় এলোমেলোভাবে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন চালক। নতুনবাজার এলাকায় এই বাসটি অন্য একটি বাসকে ধাক্কা দিতে দেখা গেছে।
এর আগে গত ৭ জুলাই রাইদার অন্য একটি বাসে উঠলে দেখা যায়, কন্ডাক্টর যার কাছ থেকে যেমন ইচ্ছা ভাড়া দাবি করছেন। অনেকের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন এবং যাত্রীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করছেন। এ সময় যাত্রীদের হুমকি-ধামকি দিতেও দেখা গেছে ওই কন্ডাক্টরকে।
রাইদার একজন কন্ডাক্টর। যাকে যাত্রীদের হয়রানি করতে দেখা গেছে
আজ শনিবার (৫ আগস্ট) তুরাগের একটি বাসে একই দৃশ্য দেখা গেছে। এই বাসটিতে নিজের ইচ্ছেমতো ভাড়া দাবি করেন কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে থাকে বলে জানা গেছে।
রাকিব নামে এক যাত্রী বলেন, আমি এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন আসা যাওয়া করি। এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। আমার মনে হয় কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ের প্রতি নজর দেন না। এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেন না। তাই এই অবস্থা। আর এসব বাসের অধিকাংশ চালকেরই লাইসেন্স নেই।
মালিবাগ সিগন্যালে দায়িত্বে থাকা এনামুল নামে এক ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, কোনো যাত্রী বা কেউ অভিযোগ দিলে আমরা ওই বাসের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়ে থাকি। বাসের নম্বর নোট করে রাখি, পরবর্তীতে সেটাকে আটক করে মামলা দেই।
জেডএ