সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
গোপালগঞ্জে কর্মচারীর বিয়েতে অংশ নিতে মরুভূমির দেশ সৌদি থেকে হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গোপালগঞ্জ সদরের অজপাড়াগাঁয় ছুটে এসেছেন মালিক আবু বন্দর। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশি কর্মচারী রাশেদুলের বিয়েতে বরযাত্রী হয়ে বিয়েও খেয়েছেন তিনি।
গোপালগঞ্জ সদরের কাজুলিয়া গ্রামের রাশেদুল শেখ চাকরি করেন সৌদি আরবের নাদিম শহরে। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা আবু বন্দরের একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করেন। রাশেদুল শেখ ৫ বছর ধরে কাজ করছেন সেখানে। একটানা একই প্রতিষ্ঠান কাজ করার সুবাদে মালিক (কফিল) আবু বন্দরের সঙ্গে একটা সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। অর্জন করেছেন সৌদি মালিকের বিশ্বাস, আস্থা ও ভালবাসা। তাইতো কর্মচারীর বিয়ের দাওয়াত নাকচ করেননি তিনি।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে সৌদি আরব থেকে বিমানে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন সৌদি নাগরিক আবু বন্দর। পরে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে গোপালগঞ্জের কাজুলিয়া গ্রামের পল্লী মঙ্গল ইউনাইটেড একাডেমি অ্যান্ড কলেজে মাঠে এসে নামেন। সেখানে সৌদি নাগরিক আবু বন্দরকে দেখতে ভিড় করে উৎসুক জনতা। ফুলের মালা দিয়ে অভিনন্দন জানায় গ্রামবাসী। এ কয়দিনে আবু বন্দর ঘুরেছেন সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।
গতকাল বৃহস্পতিবার(৫ অক্টোবর) দুপুরে কর্মচারী রাশেদুলের সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বরযাত্রী হয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌরসভার রতাইল এলাকায় অবস্থিত কনের বাড়িতে যান সৌদি নাগরিক আবু বন্দর। কর্মীর বিয়েতে সৌদি মালিক অংশ নেওয়ায় বর ও কনের বাড়িতে ছিল আলাদা আমেজ। সৌদি নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে বরযাত্রী কনের বাড়িতে পৌঁছানোর পর শুরু হয় উৎসবের পরিবেশ। আনন্দের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সৌদি নাগরিককে দেখতে ভিড় করেন বিয়ে বাড়ির অতিথিরা।
ভিনদেশীদের এমন ব্যতিক্রম বিয়ের আয়োজন দেখে কিছুটা অবাক সৌদি নাগরিক আবু বন্দরও। বিয়ে বাড়ির মেনুতে থাকা সব খাবারই খেয়েছেন তৃপ্তি করে। এই তালিকায় ছিল পোলাও, রোস্ট, কয়েক প্রকার মাছ, আস্ত খাশি, গরুর মাংস, পায়েসসহ বেশ কয়েক প্রকার খাবার। খাবার শেষে সৌদির নিয়ম অনুযায়ী কোলাকুলি করে নিজ কর্মীকে অভিনন্দন ও তার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানান।
শুক্রবার রাশেদুলের বৌভাতের অনুষ্ঠানেও অংশ নেন আবু বন্দর। বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফিরে যাবেন নিজ দেশ সৌদি আরবে। কর্মচারীর বিয়েতে এসে কেমন লাগলো সৌদি নাগরিক আবু বন্দরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার খুবই ভালো লেগেছে। রাশেদুলের বিয়েতে আসতে পেরে আমি সবচেয়ে খুশি।
সৌদি বিয়ে আর বাংলাদেশের বিয়ের মধ্যে পার্থক্য কী জানতে চাইলে আবু বন্দর বলেন, আমাদের দেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু রাতে এশার নামাজের পর। শেষ করতে হয় ফজরের আগে। ৫-৬ ঘণ্টায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিয়ের চিত্র ভিন্ন। এখানে দুই-তিন দিন ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান চলে। এরা বিয়েতে অনেক আনন্দ করার সুযোগ পায়। নাচ-গান করে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়টির (কাবিন ও মোনাজাত) সঙ্গে অনেকটা মিল আছে। আর খাবারের সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে।
বাংলাদেশি বিয়ের খাবার খেতে কেমন লেগেছে এবং সৌদিতে কী কী খাবার পরিবেশন করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে বিয়ের খাবার খেতে খুবই ভালো লেগেছে। আমি খুব তৃপ্তি করে খেয়েছি। আমাদের দেশের চাইতে খাবারে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। আমাদের দেশে বিয়ের খাবারের মেনুতে কখনও মাছ থাকে না। এদেশে দেখছি মাছ আছে। এছাড়া বেশিরভাগ বিয়েতে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি রাখা হয়।
বর রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সৌদি নাগরিক আবু বন্দরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কিছুদিন আগে দেশে আসার পর পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে ঠিক হয়। আমি নিজেই মালিককে দাওয়াত পাঠাই। তিনি দাওয়াত নাকচ না করে গ্রহণ করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে আমার বিয়েতে অংশ নিয়েছেন। আমার কফিল (মালিক) আমার বিয়েতে সৌদি থেকে এসেছে এজন্য আমি ধন্য।
এইউ