সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মাণিক্য রাজবংশের গৌরবময় অতীতের রয়েছে। তৎকালের মাণিক্য রাজার রাজ মহলটি আজো কালের সাক্ষী হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত মূল প্রাসাদটিকে বর্তমানে জাদুঘর বানানো হয়েছে।
কিছুদিন আগেও এটি বিধান সভার কার্যালয় ছিল। প্রসাদের দক্ষিণের মূল ফটক আর প্রাসাদের মাঝখানে বিশাল দুইটি দীঘি রয়েছে। পূর্বেরটা রাজার পুকুর, পশ্চিমেরটা রাণীর। দুই পুকুরের মাঝখান দিয়ে কয়েকশ’ মিটার দীর্ঘ জোড়া রাস্তা। দুই রাস্তার মাঝখানে লম্বাটে চৌবাচ্চার মাথায় ফোয়ারা। পুরো পথই শোভিত হরেক ফুল আর বাহারি লতায়।
ওই জোড়া রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যাবেন নিজেকে তখন মাণিক্য রাজার বংশধর মনে হবে। এমন অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করবে ওই জাদুঘরের দিকে এগিয়ে গেলে। কিছুদূর যাওয়ার পর মার্বেল পাথরের কারুকাজ করা মহলের মূল ফটক, দু'পাশের মূর্তি, সিঁড়ির প্রতিটা ভাঁজ মনকে আন্দোলিত করবে। মূল ফটকের কাঠের দরজাটাতে চীনা শৈল্পিক নিখুঁত কাজ দেখে আপনি ক্ষণিকের জন্য থকমে দাঁড়িয়ে যাবেন, সেই সঙ্গে সেলফি তোলার লোভটাও সমলাতে পারবেন না। তবে মনে ব্যথা লাগবে, যখন জানতে পারবেন জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ। ভারতের আইন খুবই কঠিন। পুরো জাদুঘর জুড়ে বসানো সিসি ক্যামেরায় যদি ধরা পড়ে যায় যে ভেতরে ছবি তুলেছেন তবে নগদ ৫০০ রূপী জরিমানা। তাই একটু সাবধানেই ঢুকে ঘুরতে হবে জাদুঘরে। আমি ভারতের কলকাতা ও ঢাকার জাদুঘর পরিদর্শন করেছি। তবে ত্রিপুরার জাদুঘরের বৈশিষ্ট্য একটু অন্য রকম অনুভূতি জাগিয়েছে আমাকে। এখানে ভারতীয় নানা বর্ণ-ধর্মের মানুষ, কৃষ্টি-কালচার, ঐতিহ্যসহ ভারতের অন্যতম সেভেন সিস্টার খ্যাত রাজ্যগুলোর আলাদা প্যাভেলিয়ান বা কক্ষ ঘুরতে ঘুরতে কখন যে আপনি হারিয়ে যাবেন সেসব রাজ্যে বুঝতেই পারবেন না। এই মনে হবে আপনি ত্রিপুরা রাজ্যে আছেন আবার এই মনে হবে আপনি নাগালয়ান্ডে রয়েছেন। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করবে আপনার মাথায়। ৫/৬ ঘণ্টার পরিদর্শন মনে হবে ১০ মিনিটেই শেষ হয়ে গেলো।
তবে থমকে যেতে হবে বাংলাদেশ গ্যালারিতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই। তাৎক্ষণিক আপনি নিজের গায়ে চিমটি কেঁটে যাচাই করবেন জেগে আছেন কী না। কারণ, ভারতে ঐতিহ্য-ইতিহাসের পাশাপাশি সেভেন সিস্টারের বিচিত্র ও রঙিনসব জীবন যাত্রার ছবি দেখে হঠাৎ করেই বাংলাদেশের গ্রামীণ মেঠো পথ দেখে চমকে না উঠে পারবেন না আপনি। গ্রাম বাংলার লাঙল-জোয়াল, গরুর গাড়ি, সবুজ ফসলের মাঠ, পাখ-পাখালির দৃশ্য আপনাকে থামতেই হবে ওই প্যাভেলিয়ানে। আরও চমকে যাবেন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের পরিবারের ছবি, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, পাকিস্তানের নির্যাতনের বিভীষিকাময় দৃশ্যের পাশাপাশি তাদের আত্মসমর্পণ দৃশ্য মনকে চাঙা করবে। একাত্তরের বিভীষিকাময় সময়, সীমান্তের ওপারে স্মরণার্থী শিবিরিরে দুর্বিসহ জীবন, তৎকালে ব্যবহৃত বন্ধুক, কামান, গ্রেনেড, দেশীয় অস্ত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক ইত্যাদি দেখতে দেখতে ভারতের ত্রিপুরার মাটিতে আপনি একখণ্ড বাংলাদেশকে আবিষ্কার করে ফেলবেন। এসব দেখতে দেখতে কখন যেন সময় শেষ হয়ে যায়। বের হওয়ার সিগনাল পড়েছে। তখনও বাংলাদেশ গ্যালারিতে মুগ্ধ হয়ে দেখছি আর ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের ঘ্রাণ নিচ্ছিনাম।
এমন সময় এই ভ্রমণকে স্মৃতি হিসেবে রাখতে ৫০০ টাকার জরিমানার টাকার হিসাব নিয়েই সিসি ক্যামেরার চোখকে ফাঁকি দিয়ে অতি গোপনে মোবাইল ফোন দিয়ে একটা ছবি তুলে ফেললাম। ছবিটা ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবার, তার ভাষণ এবং মুজিব-ইন্দারা চুক্তির একটি দৃশ্যের। জাদুঘর থেকে বের হচ্ছিলাম আর পকেটের জরিমানার টাকার হিসাব করছিলাম। প্রধান ফটকে জরিমানার টাকা চাহিবা মাত্রই দিয়ে দেব। কিন্তু ভাগ্যটা আমার অনুকূলে ছিল। কোনো বাধা ছাড়াই জাদুঘরের প্রধান ফটক পেরিয়ে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। সাথী বন্ধুরাও একটু ভয়ে ছিল। তারাও উৎফুল্ল হলো জরিমানা না লাগায়।
এম