সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শান্তির ধর্ম ইসলাম। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় বিভিন্ন স্থানে ইসলামের প্রসার ঘটে। এরপর মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হওয়ার পাশাপাশি ধর্ম প্রচার, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও ইসলামী স্বর্ণযুগে ব্যবসা বাণিজ্যে মক্কা থেকে ভারতীয়, আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইসলামের বিস্তার ঘটেছিল।
খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতক থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশে ইসলামের আগমন ঘটে। ইসলামের আবির্ভাবের সময় এ অঞ্চলটি বঙ্গ বা বাংলা নামে পরিচিত ছিল। সে সময় বাংলা বা বঙ্গ অঞ্চলের সীমানা শুধু বর্তমান বাংলাদেশের সীমানা দ্বারাই পরিবেষ্টিত ছিল না। বরং তৎকালীন বঙ্গদেশের সীমানা ছিল বেশ বিস্তৃত।
ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীন যুগে বাংলা ছিল প্রায় ৮০ হাজার বর্গ মাইল বিস্তৃত এক বিশাল সমভূমি। বস্তুত এ বিশাল বাংলা অঞ্চলে কবে ইসলামের আগমন ঘটে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল। তবে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ ইবনে কাসিমের সিন্ধু বিজয় গোটা ভারতবর্ষে, ইসলাম প্রচারের পথ উন্মুক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বহু মুসলিম মুবাল্লিগ, ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করেন। এ সময় মাহমুদ ও মুহায়মিনের নেতৃত্বে একদল ধর্মপ্রচারক, এ দেশে আগমন করেন বলে জানা যায়। পরে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক, বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে এ দেশে ধর্ম প্রচারকদের ব্যাপকহারে আগমন ঘটে।
১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী, তৎকালীন বাংলার সেন বংশীয় রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে ইসলামের বিজয় উদযাপন করেন। খিলজীর এ বিজয়ের ফলে বাংলায় ইসলাম ব্যাপকভাবে পরিচিত ও প্রসারিত হয়। এ সময় থেকে দলে দলে মুসলিমরা বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেন এবং ইসলাম প্রচার কাজ শুরু করেন।
ঐতিহাসিকদের অপর এক দলের মতে বাংলাদেশে ইসলামের আগমন ঘটে, খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতক থেকে দশম শতকের মধ্যেই এবং ধীরে ধীরে তা প্রসারিত হয়। বাংলাদেশে ইসলামের প্রাথমিক পরিচিতি ও প্রচারকার্য পরিচালিত হয় আরব মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে। মুসলিম বিজয় পূর্ব বাংলায় আগত বণিকরাই এ দেশে ইসলামের পরিচয় তুলে ধরেন। এ দেশে ইসলাম আগমনের প্রধান মাধ্যম ছিল আরব-ভারত ও চীন বাণিজ্য সম্পর্ক। জাহিলিয়াতের যুগ থেকেই আরব বণিকদের সঙ্গে এ অঞ্চলের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রচলিত ছিল।
ভূগোলবিদরা আরব-ভারত ও চীন বাণিজ্য পথের নানা বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, আরব-চীন বাণিজ্য যাত্রার মূল সূত্র ছিল ভারতবর্ষ। আরব বণিকরা পারস্য উপসাগর হয়ে বেলুচিস্তানের একটি বন্দরে প্রবেশ করতেন। তারপর একে একে সিন্ধু, গুজরাট, মাদ্রাজ ও কলকাতা বন্দরে প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে উপনীত হতেন। তারা এ সময় ওই অঞ্চলের সিলাহাত বা বর্তমান সিলেট ও সাদজাম বা বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরে যাত্রাবিরতি করতেন। এরপর তারা চীন সাগরে প্রবেশ করতেন।
এভাবেই আরব থেকে চীন পর্যন্ত বাণিজ্যযাত্রায় ভারত উপমহাদেশ ও বঙ্গদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। আরবরা মধ্যবর্তী এসব বন্দরেও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতেন ও সফরের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করতেন। ঐতিহাসিকদের বড় একটি অংশের মতামত হলো-সাহাবিদের একটি দল প্রথম ইসলাম প্রচার করার জন্য ভারত ও বঙ্গ অঞ্চলে (বাংলাদেশে) আগমন করেন। আর তাদের মাধ্যমেই এ দেশে ইসলামের সূচনা ঘটে।
এস