সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আজ ১৭ রমযান, ঐতিহাসিক বদর দিবস। এদিনেই ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। দ্বিতীয় হিজরীতে অনুষ্ঠিত এই বদর যুদ্ধ মক্কার কাফেরদের অন্তরে মুসলমানদের ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
মদীনা মুনাওয়ারা থেকে প্রায় ১৫০ কি:মি: দূরে অবস্থিত একটি স্থানের নাম বদর। ইতিহাস প্রসিদ্ধ বদর যুদ্ধটি এখানেই অনুষ্ঠিত হয়।
মক্কার কুরাইশদের সকল গর্ব ও অহঙ্কারের মূল কারণ ছিল সিরিয়ার সাথে অতি প্রাচীন কালের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। তাই রাজনৈতি ও ধর্মীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত বাণিজ্য ধারাটি বন্ধ করা ছিল অপরিহার্য। তাই বাণিজ্য কাফেলাকে বাঁধা দেয়ার জন্য নবী করীম সা:৩১৩ জন সাহাবীকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হলেন।
মক্কায় এ খবর পৌঁছা মাত্র ৯৫০ জন যুবকের এক বিশাল বাহিনী অস্রে-শস্রে সজ্জিত হয়ে মদীনার দিকে রওয়ানা হল। সাহাবীগণ যেহেতু ব্যাপক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তাই নবী কারীম সা: সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। যুদ্ধের জন্য সাহাবীদের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে বাণিজ্য কাফেলার পরিবর্তে কুরাইশদের বিশাল বাহিনীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।
মুসলমানগণ বদরে পৌঁছে ময়দানের উত্তর দিকে অবস্থান করলেন। আর ময়দানের অপর দিকে কাফেররা তদের তাবু স্থাপন করল। যুদ্ধের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য একটি উঁচু টিলার উপর নবীজির জন্য ছায়ার ব্যাবস্থা করা হল। বর্তমানে এখানে ‘মসজিদুল আরীশ’ নামে একটি মসজিদ বানানো হয়েছে।
ময়দানে পৌঁছে নবী কারীম সা:- এর সৈনিকেরা এক দূর্ভেদ্য প্রাচীররুপে দাঁড়িয়ে গেলেন। ১৭ রমযান সকালে মুসলমানগণ যুদ্ধের জন্য কাফেরদের মুখোমুখি হলেন। যুদ্ধ শুরু হলো। মুসলমানগণ কাফেরদের গর্দান উড়িয়ে দিতে লাগলো। কয়েক ঘন্টার মধ্যে কাফেররা ময়দান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হল। মুসলমানগণ বিজয়ীর বেশে ময়দানে অবস্থান করলো।
১৭ রমজানের বিশেষ এই রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ দোয়া করেছিলেন। ইসলামের বিজয়ে জন্য কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করেছিলেন এভাবে-
‘হে আল্লাহ! আগামীকালের (সত্য-মিথ্যার) নীতিনির্ধারণী যুদ্ধে তোমার সাহায্য আমাদের অতি প্রয়োজন। এ যুদ্ধে আমরা তোমার সাহায্য ছাড়া বিজয় লাভ করতে পারব না। আর আমরা যদি পরাজিত হই তাহলে তোমাকে সেজদা করার কিংবা তোমার নাম ধরে ডাকার লোক এ পৃথিবীতে আর নাও থাকতে পারে। অতপর তুমিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর, তুমি কী করবে। কারণ, তুমিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মালিক। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। আমরা আমাদের জীবন তোমার পথে উৎসর্গ করলাম। বিনিময়ে তোমার দ্বীনকে আমরা তোমার জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তুমি আমাদেরকে বিজয় দান করো। আমরা তোমার কাছে সাহায্য চাই।’ (যুরকানি, সিরাতে ইবনে হিশাম)
আল্লাহ তাআলা নব মুসলিম ও নতুন রাষ্ট্রে দান করলেন বিজয়। নিরস্ত্র মুসলিমরা অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীকে পরাজিত করলেন।
এ যুদ্ধে কাফেরদের পক্ষে নিহত হলো ৭০ জন। বন্দি হয় আরও ৭০ জন।
এ যুদ্ধে মুসলমানদের থেকে ১৪ জন শাহাদাত বরণ করেন।
বদরের যুদ্ধ আমাদেরকে এই শিক্ষাই দেয় যে,যদি মুসলমানগণ আল্লাহর বিধি-বিধান ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত পুরোপুরি অনুসরণ করে তাহলে আজও বিজয় এবং সাহায্য তাদের পদ চুম্বন করবে।