সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। মা হওয়ার এই অনুভূতি বিশ্বের সেরা অনুভূতি। একজন নারীকে মা হতে হলে তীব্র প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। তবে সুখের এই মুহূর্তকে আরও সুখকর করতে অনেকেই নরমাল ডেলিভারি করতে চান। চিকিৎসা পরিভাষায়, যা ভ্যাজাইন্যাল ডেলিভারি। কিন্তু আধুনিক এই সময়ে প্রচণ্ড ব্যথার ভয় কাটিয়ে উঠতে অনেকেই সিজারিয়ান ডেলিভারি (সি-সেকশন) বেছে নেন।
তবে বিভিন্ন গবেষণা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি অর্থাৎ নরমাল ডেলিভারির বিকল্প কিছু হতে পারে না। এ ব্যথা সুখকর অনুভূতি ও প্রীতিকর। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের সঙ্গে নরমাল ডেলিভারি সংক্রান্ত ব্যাপারে কথা বলেছেন গাইনোকলিস্ট ডা. ইন্দ্রনীল সাহা।
চিকিৎসকের মতে, মা হওয়ার অনুভূতি একজন নারীর কাছে সেরা অনুভূতি। যা প্রতিটি মায়ের কাছে আজীবন রয়ে যায়। এ জন্য অনেক নারীই নরমাল ডেলিভারি করাতে চান। যাকে চিকিৎসাভাষায় বলা হয় ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি।
ডা. ইন্দ্রনীল আরো বলেন, তথ্য বলছে গর্ভবতী নারীদের অধিকাংশই নরমাল ডেলিভারিতে সক্ষম। কিন্তু, কিছু নারীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে সম্প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে। যা ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। কেননা, স্বাভাবিক বিষয় সবসময়ই স্বাস্থ্যকর। যদিও ভয় থেকে যায়। তবে এই ভয়ও ভেঙে ফেলতে হবে।
নরমাল ডেলিভারি কি ঝুঁকির কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি হচ্ছে একদমই মানসিক ব্যাপার। এর জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রথমেই মানসিক শক্তির প্রয়োজন। নরমাল ডেলিভারিতে কিছু বিষয় রয়েছে যেমন- কখন ব্যথা উঠবে, কখন জরুরি পরিস্থিতি হবে এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতা রয়েছে কিনা। আবার অনেকেরই ধারণা নরমাল ডেলিভারি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
মূলত অন্তঃসত্ত্বা নারীর লেবার পেইন শুরু হওয়ার পর গর্ভস্থ শিশুর হার্টবিট নিয়মিত দেখতে হয়। অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যাপারেও নজর দিতে হয়। যা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। এ জন্য পরিকাঠামো জরুরি। পেইনলেস লেবার বা এপিডিউরাল ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যথাহীন লেবার ও এরপর সন্তান প্রসব এখন বেশ উন্নত পদ্ধতি। এখানে চিকিৎসকদেরও চিন্তা থাকে। কেননা, কিছু হলেই চিকিৎসকদের ওপর দায় পড়ে। এ জন্য অনেকে অস্ত্রোপচার বা সিজারকে নিরাপদ মনে করেন। তবে বিজ্ঞান বলছে, স্বাভাবিক নিয়মে যে পথে সন্তান প্রসব হয়, সেটাই মা ও সন্তানের জন্য স্বাস্থ্যকর।
সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কিছু বিষয় ভেবে নেওয়া উচিত। অন্তঃসত্ত্বা নারীর যদি কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা না থাকে, যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত, ব্লাড সুগার ঠিক থাকা, গর্ভস্থ শিশুর ওজন, আকার ও অবস্থান ঠিক থাকলে নরমাল ডেলিভারির জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ জন্য হাসপাতালের পরিকাঠামো রয়েছে কিনা, সেটি দেখে নিতে হবে।
কারো আগের প্রসব সিজার হলে পরেরটা নরমাল ডেলিভারি করা যায়। তবে আগে দুবার সিজার হলে পরেরটা সিজারই করতে হয়। শারীরিকভাবে সুস্থতার পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বাকে মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হবে। কেননা, সন্তান প্রসবের সময় মাকেই চাপ দিয়ে পেট থেকে সন্তান বের করতে হয়। এ জন্য তাকে মানসিকভাবে প্রচুর শক্তিশালী হতে হবে। আর শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতির জন্য অন্তঃসত্ত্বাকে নিয়মিত পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করতে হবে। তবে সবশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান প্রসব করা উচিত হবে।
এক্ষেত্রে কিছু বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন। যেমন- শারীরিক জটিলতার জন্য নরমাল ডেলিভারির সময় ইমারজেন্সি সিজারের প্রয়োজন হলে সেটি মানসিক চাপ তৈরি করে। শিশুকে ফরসেপ দেওয়া হলে মায়ের ভ্যাজাইনাল টিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ থেকে রক্তপাত বেশি হয়। পরবর্তীতে তার প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখার সমস্যা হয়। আবার কখনো কখনো দীর্ঘসময় লেবার চললে মায়ের পোস্টপার্টম হেমারেজও হয়। এমনকি ইউটেরাস থেকে রক্তক্ষরণও হয় অনেক বেশি।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে সময় খুবই কম। অপারেশন পরবর্তী জটিলতা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে যত তাড়াতাড়ি প্রবেশ করা যায় ততই ভালো মনে করে তারা। সেদিক থেকে এই ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি অনেক বেশি নিরাপদ। এই পদ্ধতিতে শিশুর সঙ্গে মায়ের বন্ডিং খুব ভালো হয়। এর পাশাপাশি শিশুর ফুসফুসও ভালো থাকে।
এ ছাড়া ভ্যাজাইনাতে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে যার মধ্যে দিয়ে প্রসবের সময় শিশু বেরিয়ে আসে। আর তখন সেই ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে শিশুর ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব ভালো হয় এবং তারা অনেক বেশি সুস্থ থাকে।
এস