সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত আরও পাঁচ ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিআইডির চলমান অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল উৎপাটনসহ অবৈধ উপায়ে চিকিৎসকের মতো মহান পেশায় ভর্তি হওয়া ডাক্তারদের সন্ধানপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য সিআইডির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতাসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সিআইডির সাইবার টিম।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিম (৪০), ডা. লুইস সৌরভ সরকার (৩০), ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল (২৬), ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা (২৪)।
মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের মালিক। ডাক্তারি পেশা বাদ দিয়ে জড়ান কোচিং ব্যবসায়। প্রতিষ্ঠা করেন থ্রি ডক্টরস কোচিং খুলনা।
তিনি নিজেকে ডাক্তার তৈরির কারিগর হিসেবে পরিচয় দেন। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য শত শত শিক্ষার্থীকে এভাবে ভর্তি করিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার এবং তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল, ফ্ল্যাট, জমি, মাছের ঘের, হোটেল শেয়ারসহ গড়েছেন বিপুল সম্পদ।
ডা. তারিমের বিরুদ্ধে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এর আগেও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
ডা. লুইস সৌরভ সরকার খুলনা মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের শিক্ষক। বর্তমানে একটি বেসরকারি এনজিওতে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। তিনি খুলনা থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া তাকে বাসায়ও পড়াতেন তারিম। কম মেধাবী হওয়ার পরও তারিমের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে তিনি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। তারিমের ঘনিষ্ঠজন ও তৎকালীন কোচিংয়ের তিনজন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও তিনি চারটি ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার সব বিষয়েই ফেল করেছেন। একাধিকবারের চেষ্টায় তিনি পাস করেন।
লামিয়ার প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়ার বিষয়টি খুলনার চিকিৎসকমহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তির জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডা. তারিমের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিমের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র ক্রয় করে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছয়টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।
এর আগে, ১৩ আগস্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সাত ডাক্তারসহ প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার টিম।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে আটজন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুলসংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়, যেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের সদস্যদের নাম পাওয়া যায়।
জেডএ