সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মুখোশের আড়ালে থাকা সংস্কৃতিকর্মীদের একাংশের কুৎসিত চেহারা বেরিয়ে এসেছে ফাঁস হওয়া গোপন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের স্ক্রিনশটের সূত্র ধরে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা যখন রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিলেন, তখন তারা সেই গণহত্যার উৎসাহ জুগিয়েছেন। ‘আলো আসবেই’ নামের গ্রুপটিতে এমন সব বার্তা আদান-প্রদান করেছেন, যা পড়লে মেরুদণ্ড শীতল হয়ে আসতে বাধ্য।
অনেক জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি চলচ্চিত্র-নাট্য পরিচালক, সাংবাদিক ও মন্ত্রীরাও ছিলেন গ্রুপটিতে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন— অরুণা বিশ্বাস, আজিজুল হাকিম, আশনা হাবীব ভাবনা, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, জ্যোতিকা জ্যোতি, দীপান্বিতা মার্টিন, ফজলুর রহমান বাবু, ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজ আহমেদ, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, শামীমা তুষ্টি, সাইমন সাদিক, সাজু খাদেম, তানভীন সুইটি, সুবর্ণা মুস্তাফা, সোহানা সাবা, স্বাগতা, হৃদি হক, জায়েদ খান, এস এ হক অলীক, মাসুদ পথিক, রোকেয়া প্রাচী, মিলন ভট্টাচার্য, জামশেদ শামীম, মুশফিকুর রহমান গুলজার, খোরশেদ আলম খসরু, আহসান হাবিব নাসিম, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি, সাংবাদিক লিমন আহমেদসহ আরও অনেকে। মন্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। যেসকল অভিনয়শিল্পী-সাংবাদিকরা স্বৈরাচার হাসিনার বিপক্ষে ছিলেন, তাদের সমালোচনা করা হতো। চিনে রাখারও হুমকি দেয়া হয়। তাছাড়া ছাত্র-আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হতো সেখানে। আন্দোলন কেন্দ্র করে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) পরিদর্শন করে মায়াকান্না করার পরিকল্পনাও এই গ্রুপে করা হয়েছিল। গণহত্যার পক্ষে কোথায় কোথায় অবস্থান নিতে হবে—সেটাও আলোচনা করা হতো।
হাসিনার গণহত্যার প্রতিবাদে যখন আজমেরি হক বাঁধন, রাফিয়াত রশীদ মিথিলা, মোশাররফ করিমরা রাজপথে নেমেছিলেন, তখন তাদের একহাত নেন গ্রুপ সদস্যরা। এ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানকেও তাচ্ছিল্য করেন মিলন ভট্টাচার্য। অপি করিমকেও ছেড়ে কথা বলেননি তারা।
গোপন গ্রুপটিকে সংগঠিত করার মূল ভূমিকা পালনকারীর অন্যতম হলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। তিনি বুঝতে পারেন তাদের এই কাজটি সহজ নয়। তবুও যেকোনো মূল্যে ছাত্র-আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য সবাইকে একত্রিত থাকার আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে একজনের বিপদে অন্যদের ঝাপিয়ে পড়ার অনুরোধ করেন। ফেরদৌসও বার্তা পাঠিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরুর তাগাদা দিতেন।
আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের ঘনিষ্ঠ সোহানা সাবা গ্রুপটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেন। নিজেদের মধ্যে কখনও মতের অমিল হলে সবাইকে মাথা ঠাণ্ডা রাখার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া নির্দেশনামূলক বার্তা প্রদানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। অরুণা বিশ্বাস কোমলমতি ছাত্রদের গায়ে গরম পানি ঢালতে বলেন।
ছাত্র বিরোধী আন্দোলনে ঢাকার বাইরে থাকায় গ্রুপে দুঃখ প্রকাশ করেন জায়েদ খান, আশনা হাবীব ভাবনা, সাইমন সাদিকসহ অনেকে। তবে মানসিকভাবে পাশে আছেন বলে জানান তারা।
সবথেকে অবাক করা বিষয় হলো, যারা ছাত্র হত্যার ইন্ধন দিয়েছেন, তারাই রাস্তায় নেমে এর বিচার চেয়েছেন। আবার বাসায় ফিরে গ্রুপে তাদের জামাত-বিএনপি বলে আক্রমণ করেছেন।
এছাড়া গ্রুপে এমন অনেক সদস্য ছিলেন যারা সেভাবে আলোচনায় অংশ নেননি। এখন স্ক্রিনশট ফাঁস হওয়ার পর তারা নিজেদের দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা দাবি করছেন। বলছেন, গ্রুপের সদস্য হওয়া মানেই ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে থাকা নয়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বের হয়ে যেতে পারেননি। আর ভাবনা তো শহীদ আবু সায়ীদের ছবি এঁকে সাধু সাজার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে জ্যোতিকা জ্যোতি গণমাধ্যমে দাবি করেন, তিনি ছাত্রদের বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি।
পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর তাদের অনেকেই ভোল পাল্টেছেন। নতুন বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু স্ক্রিনশট ফাঁসের পর তোপের মুখে পড়েছেন। নেটিজনরা বলছেন, তারা হয়তো ভেবেছিলেন গণহত্যার সমর্থনের নীল নকশা কখনও প্রকাশ পাবে না। কিন্তু পাপ তো চেপে রাখা যায় না। সেটা বের হয়ে আসেই।
আরএস/কে