সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বাঙালি সমাজ যখন ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল, সেই সময় বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালি মুসলমান নারী জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম একজন পথিকৃৎ।
নারীদের স্বপ্ন আর অগ্রগতি নিয়ে বেগম রোকেয়া রচিত উল্লেখযোগ্য একটি উপন্যাসের নাম ‘সুলতানাস ড্রিম’। এটি বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে ধ্রুপদী নারীবাদী কল্পকাহিনীর একটি আদিতম উদাহরণ। তিনি যে সময়ে এই বইটি লিখেছেন সেই সময়ের ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় এই লেখাকে অত্যন্ত সাহসী ও বিপ্লবী সাহিত্যকর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়।
১৯০৫ সালে মাদ্রাজের ‘দ্য ইন্ডিয়ান লেডিজ’ ম্যাগাজিনে প্রথম প্রকাশিত হয় ইংরেজি ভাষায় লেখা উপন্যাসটি। বই আকারে বের হয় ১৯০৮ সালে। ১০০ বছরের বেশি সময় আগে প্রকাশিত ‘সুলতানাস ড্রিম’ অবলম্বনে এবার সিনেমা বানিয়েছেন স্প্যানিশ নারী নির্মাতা ইসাবেল হারগুয়েরা। স্প্যানিশ ভাষায় সিনেমাটির নাম রাখা হয়েছে ‘এল সুয়েনো দে লা সুলতানা’, ইংরেজিতে ‘সুলতানাস ড্রিম’।
৮৬ মিনিট দৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন সিনেমাটি স্থান পেয়েছে স্পেনের সান সেবাস্তিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে উৎসবের ৭১তম আসর। উৎসবের চতুর্থ দিন অর্থাৎ আগামীকাল ২৫ সেপ্টেম্বর এ উৎসবে প্রথমবারের মতো দেখানো হবে ‘সুলতানাস ড্রিম’ সিনেমাটি। নির্মাতা ইসাবেল হারগুয়েরার সঙ্গে যৌথভাবে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন তাঁর জীবনসঙ্গী জিয়ানমার্কো সেরা।
এতে থাকছে বাঙালি সংগীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের লেখা একটি গান। গানটির সংগীতায়োজনে আছেন তাজদির জুনায়েদ, গেয়েছেন দীপান্বিতা আচার্য। স্পেন ও জার্মানির পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ‘সুলতানাস ড্রিম’ প্রযোজনা করেছে। সিনেমাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে পাঁচটি ভাষা—বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ ও বাস্ক।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা ইসাবেল জানিয়েছেন— কীভাবে তিনি বেগম রোকেয়ার এ লেখা খুঁজে পেলেন!
ইসাবেল বলেন, “২০১২ সালে দিল্লি গিয়েছিলাম। একদিন প্রবল বৃষ্টির মধ্যে আশ্রয় নিই একটি আর্ট গ্যালারিতে। সেখানে ‘সুলতানাস ড্রিম’ বইটি খুঁজে পাই। এত আগে লেখা একটি বই, যেখানে নারীদের একটি ভিন্ন পৃথিবীর কল্পনা করা হয়েছে! বইটি পড়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। একেবারে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার মতো। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিই, এ নিয়ে আমি সিনেমা বানাব।”
এরপর এ সিনেমার কাজে কয়েকবার ভারতে যান ইসাবেল। দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নারীদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছেন। তাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, ১০০ বছরের বেশি সময় আগের লেখা এ বইয়ের বিষয়বস্তু এখনকার সময়ে কতটা প্রাসঙ্গিক! এমনকি ইসাবেল চষে বেড়িয়েছেন ভারতের প্রত্যন্ত এলাকা। যেহেতু অ্যানিমেশন সিনেমা, নির্মাতা তাই সারা পৃথিবীর নামী চিত্রশিল্পীদের পরামর্শ নিয়েছেন।
প্রায় ৮ বছরের গবেষণা শেষে ২০২০ সালে ‘সুলতানাস ড্রিম’-এর কাজ শুরু করেন ইসাবেল। তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন উৎসবে দেখানোর পর আগামী ১৭ নভেম্বর স্পেনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।