দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন নিজ সংগঠনের দুই নেতার মারধরে কানের পর্দা ফাটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম। শুক্রবার (৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায়।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আজ দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু এই ঘটনার কোনো সুরাহা পাইনি। শুধু একজন আবাসিক শিক্ষক আমার খোঁজ নিয়েছেন। তবে দুই পক্ষকে ডেকে কোনো কথা বলেননি। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে আমি অভিযুক্তদের ভয়ে চলাফেরা করতে পারছি না। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার আবেদন করার পরেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় আমি হল ত্যাগ করেছি।’
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমি ক্যাম্পাসে ফিরব না। একই সঙ্গে শিক্ষাজীবনেরও এখানেই ইতি টানব। আর যখন ক্যাম্পাসে ফিরব তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।’
জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ সংগঠনের দুই নেতার মারধরে কান ফেটে রক্ত বের হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নজরুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গত মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের অতিথিকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগকারী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক। তবে বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তিনি।
অপর দিকে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস এবং সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক আল আমিন।
অভিযোগপত্র ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে শের-ই-বাংলা হলের রিডিং রুমে পড়তে ছিলের নজরুল। কিন্তু পাশেই উচ্চ স্বরে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক আল আমিন। নজরুল তাকে জোরে কথা বলতে নিষেধ করায় আল আমিন তার ওপর চড়াও হন। দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এ সময় নজরুলকে হুমকি দিয়ে আল আমিন বলেন, ‘তুই জানিস আমি তোর কী অবস্থা করতে পারি?’
এরপর আল আমিন বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমসকে ডেকে নিয়ে আসেন। দুজনে মিলে নজরুলকে শের-ই-বাংলা হলের বাথরুমে নিয়ে গিয়ে গেস্টরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। মারধরের একপর্যায়ে নজরুল মাটিতে পড়ে যান এবং তার কান দিয়ে রক্ত বের হয়। এ বিষয়ে কোথাও অভিযোগ জানালে অথবা কাউকে বললে তাকে আবার মারা হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যান অভিযুক্তরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাম কানে আগে থেকেই সমস্যা ছিল। আর সেই কানেই আঘাত করার ফলে কান দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয় এবং আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করে পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে ডাক্তার আমাকে বলে আমার কানের যে সমস্যা হয়েছে তা সারিয়ে তুলতে বেশ সময় লাগবে এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করাতে হবে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন বলেন, ‘সেদিন আমাদের মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। তবে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরে সেটি জেমস ভাই ও প্রভোস্ট স্যার মিলে সমাধান করে দিয়েছেন। এখন সে তৃতীয় কোনো পক্ষের প্ররোচনায় সহানুভূতি কুড়ানোর জন্য অভিযোগটি করেছে। আর তার বাম কানের সমস্যাটা নতুন নয়। সে তিন-চার বছর যাবৎ চিকিৎসা করাচ্ছেন।’
বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমস বলেন, ‘১ আগস্ট রাতে তাদের দুজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে আল আমিন আমাকে ফোন করে। পরে আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে দুজনের মধ্যে মিটমাট করে দিই। পরদিন হল প্রভোস্ট স্যার তাদের ডেকে অফিশিয়ালি এই সমস্যার মীমাংসা করে দেন। আমি সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। তবে এর আগে তাদের মধ্যে সামান্য হাতাহাতি হয়ে থাকতে পারে।’
এদিকে ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য হলের দুজন আবাসিক শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছে হল প্রশাসন। দুই আবাসিক শিক্ষক হলেন ড. শাহ মুখতার আহমেদ ও ড. আশরাফুল ইসলাম। আজ শুক্রবার অফিশিয়াল ছুটি থাকায় তারা আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে শের-ই বাংলা হল প্রাধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পরদিন আমি দুই পক্ষকেই ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু সে সময় নজরুল আমাকে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানায়নি। তবে হল প্রাধ্যক্ষ হিসেবে তার নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করব।’
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তের জন্য দুজন আবাসিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অফিশিয়ালি এখনো দায়িত্ব না পেলেও তারা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। একজন আবাসিক শিক্ষক ভুক্তভোগী নজরুলের সঙ্গে কথাও বলেছেন। আশা করছি তদন্তের মাধ্যমে মূল ঘটনা উঠে আসবে।’
জেবি